ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো (ISRO) আরেকটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের প্রযুক্তিগত আত্মনির্ভরতার পথে। সম্প্রতি তারা উন্মোচন করেছে ভারতের প্রথম সম্পূর্ণভাবে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি স্পেস-গ্রেড মাইক্রোচিপ (ISRO) – যার নাম “বিক্রম ৩২-বিট প্রসেসর”। এটি শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, বরং দেশের মহাকাশ অভিযানের জন্য একটি বড় মাইলফলকও বটে।
কেন বিশেষ এই বিক্রম প্রসেসর?
বর্তমানে মহাকাশে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ, যেমন স্যাটেলাইট, রকেট ও অন্যান্য পে-লোডের জন্য ব্যবহৃত মাইক্রোচিপগুলি মূলত বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তবে মহাকাশের চরম পরিবেশ—উচ্চ তাপমাত্রা, বিকিরণ, চাপের তারতম্য—এই চিপগুলোর জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
বিক্রম ৩২-বিট প্রসেসর স্পেস-গ্রেড মানে তৈরি, অর্থাৎ এটি মহাকাশের কঠিন পরিবেশেও নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করতে সক্ষম। এটি একটি Radiation-Hardened বা বিকিরণ-সহনশীল প্রসেসর, যার ফলে এটি উচ্চ বিকিরণের মধ্যেও কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে পারে।
কে তৈরি করেছে বিক্রম প্রসেসর?
এই প্রসেসরটি তৈরি করেছে সেমিকন্ডাক্টর ল্যাবরেটরি (SCL), চণ্ডীগড়, যা ডিপার্টমেন্ট অফ স্পেস-এর অধীন একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। ইসরোর প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনায় তৈরি এই প্রসেসর ভারতের আত্মনির্ভর প্রযুক্তি বিকাশের প্রমাণ।—
বিক্রম প্রসেসরের বৈশিষ্ট্য:
৩২-বিট RISC (Reduced Instruction Set Computer) আর্কিটেকচার: দ্রুত ও দক্ষ প্রসেসিংয়ের জন্য উন্নত প্রযুক্তিRadiation-Hardened Design: মহাকাশের তেজস্ক্রিয় পরিবেশে কাজ করার ক্ষমতাLow Power Consumption: শক্তি সাশ্রয়ী, যা স্যাটেলাইটে গুরুত্বপূর্ণ
High Reliability: দীর্ঘমেয়াদী মহাকাশ অভিযানে ব্যবহারের জন্য উপযোগী
Indigenous Design & Fabrication: সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি
ব্যবহার কোথায় হবে?
ইসরো এই প্রসেসরটি মূলত স্যাটেলাইট, রকেটের ফ্লাইট কম্পিউটার, ও পে-লোড কন্ট্রোল সিস্টেমে ব্যবহার করতে চায়। ভবিষ্যতের চন্দ্র ও মঙ্গল মিশনে এই চিপ ব্যবহার হতে পারে। এতে ভারতের উপর নির্ভরতা বাড়বে নিজেদের তৈরি প্রযুক্তির ওপর, এবং বিদেশী সংস্থার ওপর নির্ভরতা কমবে।
আত্মনির্ভর ভারতের পথে আরও এক ধাপ
“আত্মনির্ভর ভারত” (Aatmanirbhar Bharat) উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য হল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বদেশি সমাধান খুঁজে বের করা। বিক্রম ৩২-বিট প্রসেসরের মাধ্যমে ভারত এখন স্পেস-গ্রেড সেমিকন্ডাক্টর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট নির্মাণ ও মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে দেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।