ভারত থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনছে ভিয়েতনাম

India Vietnam defense deal: ভারত এবং ভিয়েতনামের মধ্যেকার কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে চলেছে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের ব্রাহ্মোস সুপারসনিক…

India Vietnam defense deal

India Vietnam defense deal: ভারত এবং ভিয়েতনামের মধ্যেকার কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে চলেছে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল সিস্টেম ক্রয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। এই চুক্তি সম্পন্ন হলে ভিয়েতনাম হবে ফিলিপাইনের পর দ্বিতীয় দেশ, যারা ভারতের তৈরি ব্রাহ্মোস মিসাইল কিনতে চলেছে।

ব্রাহ্মোস মিসাইল: ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির একটি মাইলফলক
ভারত এবং রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে তৈরি ব্রাহ্মোস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম ক্রুজ মিসাইল। এর সর্বোচ্চ গতি ম্যাক ২.৮ থেকে ম্যাক ৩ পর্যন্ত, যা শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যত অকার্যকর করে তুলতে সক্ষম। ২৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার ক্ষমতা ব্রাহ্মোস মিসাইলকে একটি অতুলনীয় অস্ত্র হিসেবে স্থান দিয়েছে।

   

ভিয়েতনাম দীর্ঘদিন ধরেই তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে আগ্রহী, বিশেষত চিন সাগরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে। এই পরিস্থিতিতে ব্রাহ্মোস মিসাইল তাদের প্রতিরক্ষা শক্তিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

ভারত-ভিয়েতনাম প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: নতুন উচ্চতায়
ভারত এবং ভিয়েতনামের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। উভয় দেশই দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চিনের প্রভাব মোকাবিলা করতে একে অপরের পাশে থাকার চেষ্টা করছে।

চলতি চুক্তি সম্পন্ন হলে, ভিয়েতনামের নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। ব্রাহ্মোস মিসাইল তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হবে, যা শত্রুপক্ষের নৌবহর বা স্থলক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।

চিনের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই চুক্তি চিনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হতে পারে। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আগ্রাসন এবং সামরিক উপস্থিতি নিয়ে বহু বছর ধরেই বিতর্ক চলছে। ভিয়েতনাম যদি ব্রাহ্মোস মিসাইল সংগ্রহ করে, তবে এটি চিনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

চিন ইতিমধ্যেই ভারতের ব্রাহ্মোস মিসাইল রপ্তানি কার্যক্রমকে সন্দেহের চোখে দেখে। ফিলিপাইনের পর ভিয়েতনামের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ যদি এই মিসাইল সংগ্রহ করে, তবে তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের কূটনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা কৌশলের সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

চুক্তির আর্থিক দিক এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া
এই ৭০০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন খাতকে আরো মজবুত করবে। এটি ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা এবং উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং ব্রাহ্মোস এয়ারোস্পেসকে নতুন প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য উৎসাহিত করবে।

ব্রাহ্মোস মিসাইলের উৎপাদনে দেশীয় উপাদানের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চুক্তি শুধু প্রতিরক্ষা খাতে নয়, বরং ভারতীয় অর্থনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ভিয়েতনামের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনা
ভিয়েতনামের সামরিক বাহিনী বর্তমানে তাদের নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং স্থলবাহিনীর আধুনিকীকরণে মনোযোগ দিচ্ছে। ব্রাহ্মোস মিসাইলের অন্তর্ভুক্তি তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলকে নতুন মাত্রা দেবে। এটি শত্রুপক্ষের জলসীমা লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় তাদের সক্ষমতা বাড়াবে।

ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি: একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ
ভারত তার প্রতিরক্ষা রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সক্রিয় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ব্রাহ্মোস মিসাইল রপ্তানি এই প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার প্রতিরক্ষা রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।

ফিলিপাইনের পর ভিয়েতনামের মতো একটি কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দেশকে ব্রাহ্মোস মিসাইল রপ্তানি করলে ভারতের রপ্তানি বাজার আরও প্রসারিত হবে।

ভারত-ভিয়েতনাম প্রতিরক্ষা চুক্তি শুধুমাত্র দুটি দেশের সম্পর্ক মজবুত করার মাধ্যম নয়, এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ব্রাহ্মোস মিসাইল ভিয়েতনামের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় শক্তি যোগাবে এবং ভারতকে প্রতিরক্ষা রপ্তানির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে স্থাপন করবে।

এই চুক্তি চিনসহ আন্তর্জাতিক পরিসরে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে এটি নিশ্চিত যে, ভারত এবং ভিয়েতনামের মধ্যে এই প্রতিরক্ষা সহযোগিতা উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।