ভোপাল: মধ্যপ্রদেশের বিদিশা জেলা সদর হাসপাতালে শুক্রবার রাতে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। হিজাব খোলার অনুরোধকে কেন্দ্র করে চিকিৎসক ও নার্সদের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে রোগীর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর হাসপাতালে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় একাধিক ডাক্তার ও নার্স আহত হয়েছেন এবং কয়েকটি যন্ত্রপাতি ভেঙে গেছে।
সূত্রের খবর, এক মহিলা রোগীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসার আগে ডাক্তাররা রোগীর মুখ দেখা প্রয়োজন, কারণ তা রোগ নির্ণয় ও প্রাথমিক পরীক্ষার অংশ। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক যখন রোগীকে হিজাব খুলে মুখ দেখাতে বলেন, তখন তাঁর সঙ্গে আসা আত্মীয়রা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
ভারত নয়, এই দেশে বসছে আইপিএলের মিনি নিলামের আসর!
প্রথমে মৌখিক তর্কাতর্কি শুরু হলেও মুহূর্তের মধ্যেই তা রূপ নেয় শারীরিক হামলায়। চিকিৎসক ও নার্সদের মারধর করা হয়, চেয়ার-টেবিল ছোঁড়া হয়, এমনকি ওয়ার্ডের ভিতর অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মনিটরও ভাঙচুর করা হয়।
একজন নার্সের বক্তব্য, “আমরা রোগীকে অপমান করিনি, শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্যই মুখ দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। একজন সহকর্মীকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়।” ঘটনার পরপরই হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পুলিশকে খবর দেন।
বিদিশা থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং কয়েকজনকে আটক করে। হাসপাতাল প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা এবং সরকারি কর্মীর উপর হামলার অভিযোগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “এটা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ঘটনা। হাসপাতালে ধর্ম বা পোশাক নয়, চিকিৎসাই মুখ্য। কর্মরত ডাক্তার-নার্সদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।” ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য জুড়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
বিরোধী দল বিজেপি অভিযোগ করেছে, “এ ধরনের ঘটনায় ধর্মীয় উগ্রপন্থার ছাপ স্পষ্ট। যারা চিকিৎসা কর্মীদের উপর হামলা চালাচ্ছে, তাদের কড়া হাতে দমন করতে হবে।” অন্যদিকে, স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাংশের দাবি, “ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির ফল, কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্য ছিল না।”
তবে হাসপাতালের অভ্যন্তরে ধর্মীয় পোশাক নিয়ে এই প্রথম নয়, আগেও বিভিন্ন রাজ্যে চিকিৎসা চলাকালীন হিজাব, বোরখা বা মুখঢাকা পোশাক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসক মহলে মত, রোগ নির্ণয়ের স্বার্থে কখনও কখনও মুখ দেখা প্রয়োজন, সেটিকে ধর্মীয় ইস্যুতে রূপান্তরিত করা বিপজ্জনক।
এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ঘটনাটি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ লিখছেন, “এটা চিকিৎসকদের উপর হামলা নয়, এটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর আঘাত,” আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন, “ধর্মের নামে যদি হাসপাতালেও হিংসা ঢোকে, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?”


