উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ অসুস্থ’ ধনখড়ের

সোমবার ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, স্বাস্থ্যগত কারণ ও চিকিৎসকদের পরামর্শের কথা উল্লেখ করে। তিনি সংবিধানের…

Opposition Passes No-Confidence Motion Against Jagdeep Dhankhar in Rajya Sabha, Tension in Parliament

সোমবার ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, স্বাস্থ্যগত কারণ ও চিকিৎসকদের পরামর্শের কথা উল্লেখ করে। তিনি সংবিধানের ৬৭(ক) অনুচ্ছেদের অধীনে তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করেছেন। ২০২২ সালের ১১ আগস্ট থেকে ভারতের ১৪তম উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা ধনখড় তাঁর পদত্যাগপত্রে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জগদীপ ধনখড় তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, “চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য, আমি ভারতের উপরাষ্ট্রপতির পদ থেকে, সংবিধানের ৬৭(ক) অনুচ্ছেদের অধীনে, তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করছি।” তিনি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর “অটুট সমর্থন” এবং তাঁদের মধ্যে গড়ে ওঠা “স্নেহপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ কর্ম-সম্পর্কের” জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের সহযোগিতাকে তিনি “অমূল্য” বলে উল্লেখ করেছেন। ধনখড় লিখেছেন, “আমি এই সময়ে অনেক কিছু শিখেছি। সমস্ত মাননীয় সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে যে উষ্ণতা, আস্থা ও ভালোবাসা পেয়েছি, তা আমার স্মৃতিতে চিরকাল অম্লান থাকবে।”

   

৭৪ বছর বয়সী জগদীপ ধনখড় ২০২২ সালের আগস্টে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর রাজ্যপালের মেয়াদে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে মতবিরোধে জড়িয়েছিলেন। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনের দায়িত্বও পালন করেছেন। তাঁর আমলে তিনি সংসদীয় আধিপত্য এবং সুপ্রিম কোর্টের মৌলিক কাঠামো মতবাদ নিয়ে সমালোচনা করে আলোচনায় এসেছিলেন। বিশেষ করে, ২০২৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর সমালোচনা করেছিলেন, যেখানে তামিলনাড়ুর রাজ্যপালের কিছু পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তিনি সুপ্রিম কোর্টের এই ক্ষমতাকে “গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের পারমাণবিক অস্ত্র” বলে অভিহিত করেছিলেন।

ধনখড়ের পদত্যাগের পেছনে স্বাস্থ্যগত কারণ প্রধান হলেও, এটি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনার সৃষ্টি করেছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তিনি বুকে ব্যথার কারণে দিল্লির এইমস-এ চার দিনের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময় তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানানো হয়েছিল। তবে, তাঁর হঠাৎ পদত্যাগ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে প্রশ্ন তুলেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে তাঁর সমালোচনামূলক মন্তব্য এবং বিরোধী দলগুলির অভিযোগ তাঁর এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ তাঁর বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনার চেষ্টা করেছিল, তবে তা সংসদীয় অধিবেশন শেষ হওয়ায় পেশ করা যায়নি।

Advertisements

সংবিধানের ৬৮(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। বর্তমানে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারপার্সন হরিবংশ নারায়ণ সিং অস্থায়ীভাবে রাজ্যসভার চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করবেন। ধনখড়ের পদত্যাগ ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে সংসদের চলমান মনসুন অধিবেশনের প্রথম দিনেই এই ঘটনা ঘটায়।

ধনখড় তাঁর পদত্যাগপত্রে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতি এবং বিশ্বমঞ্চে দেশের উত্থানের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, “এই গৌরবময় পদ থেকে বিদায় নেওয়ার সময়, আমি ভারতের বিশ্বমঞ্চে উত্থান ও অসাধারণ সাফল্যের প্রতি গর্ব অনুভব করছি এবং তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আমার দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করছি।” তাঁর এই বিদায় বক্তব্য ভারতের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর আশাবাদকে প্রতিফলিত করে।
এই পদত্যাগের পর ভারতের রাজনৈতিক মহলে নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী কলেজের মাধ্যমে নতুন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন। এই প্রক্রিয়া কীভাবে এগোবে এবং কে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হবেন, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি এখন রাজনৈতিক মহলের দিকে।