উপরাষ্ট্রপতি এনক্লেভ থেকে বিদায় নিলেন জগদীপ ধনখড়

ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) আজ সোমবার সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির চার্চ রোডে অবস্থিত উপরাষ্ট্রপতি এনক্লেভ থেকে বিদায় নিয়েছেন। গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্যগত কারণ…

Jagdeep Dhankhar

ভারতের প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) আজ সোমবার সন্ধ্যায় নয়া দিল্লির চার্চ রোডে অবস্থিত উপরাষ্ট্রপতি এনক্লেভ থেকে বিদায় নিয়েছেন। গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করার পর তিনি এই এনক্লেভে থেকে গিয়েছিলেন। তাঁর পদত্যাগ গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, এবং এরপর থেকেই ধনখড়ের গতিবিধি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছিল।

সূত্রের খবর, ধনখড় তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে দক্ষিণ দিল্লির ছত্তরপুর এনক্লেভে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের (আইএনএলডি) নেতা অভয় সিং চৌতালার ফার্মহাউসে স্থানান্তরিত হচ্ছেন। এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

   

৭৪ বছর বয়সী জগদীপ ধনখড় ২০২২ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ভারতের ১৪তম উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০২২ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রার্থী মার্গারেট আলভাকে পরাজিত করে ৫২৮ ভোটে জয়ী হন, যা ১৯৯২ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ ভোটের ব্যবধান ছিল।

তাঁর পদত্যাগের পর থেকে তাঁর অবস্থান নিয়ে বিরোধী দলের নেতারা প্রশ্ন তুলেছিলেন। শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউত এবং এনসিপি (এসপি) নেতা শরদ পাওয়ার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ধনখড় তাঁদের সময় দিতে পারেননি।

ধনখড়ের পদত্যাগের পিছনে স্বাস্থ্যগত কারণ ছাড়াও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের জল্পনা উঠেছে। সূত্রের খবর, তিনি বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব গ্রহণ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

এই ঘটনার পর এনডিএ-র পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা এড়াতে ধনখড় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এই পদত্যাগকে “অভূতপূর্ব” বলে অভিহিত করেছেন এবং এর পিছনে “গভীর কারণ” রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন।

ধনখড় গত এপ্রিলে সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে নির্মিত উপরাষ্ট্রপতি এনক্লেভে স্থানান্তরিত হয়েছিলেন। এই এনক্লেভে তিনি প্রায় ১৫ মাস কাটিয়েছেন। পদত্যাগের পরপরই তিনি তাঁর জিনিসপত্র গোছানো শুরু করেন এবং আজ সন্ধ্যায় তিনি এই বাসভবন ত্যাগ করেছেন।

কেন্দ্রীয় আবাসন ও নগর বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ধনখড় লুটিয়েন্স দিল্লিতে একটি টাইপ-৮ বাংলো পাবেন, যা সাধারণত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বা জাতীয় দলের সভাপতিদের জন্য বরাদ্দ করা হয়। তবে, সরকারি বাংলোর ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তিনি ছত্তরপুর এনক্লেভের ফার্মহাউসে থাকবেন।

Advertisements

ধনখড়ের রাজনৈতিক যাত্রা বেশ উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৮৯ সালে রাজস্থানের ঝুনঝুনু থেকে লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন এবং ১৯৯০-৯১ সালে চন্দ্রশেখর মন্ত্রিসভায় সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে তাঁর কার্যকাল তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর একাধিক সংঘর্ষ রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়েছিল।

পদত্যাগের পর ধনখড় তাঁর গ্রাম রাজস্থানের কিথানায় যান এবং সম্প্রতি দিল্লির আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালে দাঁতের চিকিৎসার জন্য যান, যা তাঁর প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তিনি যোগব্যায়াম এবং টেবিল টেনিস খেলে সময় কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

উপরাষ্ট্রপতি পদে তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এনডিএ-র প্রার্থী মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণন এবং বিরোধী দলের প্রার্থী প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

 

ধনখড়ের পদত্যাগ এবং এনক্লেভ ত্যাগ রাজনৈতিক মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাঁর স্বাস্থ্যগত কারণ নিয়ে যেমন আলোচনা চলছে, তেমনি রাজনৈতিক চাপের কথাও উঠে আসছে। আগামী দিনে তাঁর রাজনৈতিক ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।