ভারতের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের (Vice President Election) জন্য মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এবং বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৯৬ শতাংশ সাংসদ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সকাল ১০টায় প্রথম ভোটদাতা হিসেবে তাঁর ভোট প্রদান করেন।
এই নির্বাচনে এনডিএ-র প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন এবং বিরোধী জোট ইন্ডিয়া ব্লকের প্রার্থী প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডির মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত চলবে, এবং গণনা শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। ফলাফল রাতের মধ্যেই ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটি জগদীপ ধনখড়ের অপ্রত্যাশিত পদত্যাগের পর প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে, যিনি গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেন। এই নির্বাচনে এনডিএ-র প্রার্থী হিসেবে মহারাষ্ট্রের গভর্নর সিপি রাধাকৃষ্ণন এবং বিরোধীদের প্রার্থী হিসেবে প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডি মনোনীত হয়েছেন।
সংসদের উভয় কক্ষের সাংসদরা এই নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন, এবং ভোটগ্রহণ গোপন ব্যালটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই নির্বাচনে কোনো দলীয় হুইপ জারি করা যায় না, ফলে সাংসদরা তাদের বিবেকের ভিত্তিতে ভোট দিতে পারেন।
বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইলেক্টোরাল কলেজের মোট শক্তি ৭৮১, যার মধ্যে লোকসভায় ৫৪২ এবং রাজ্যসভায় ২৩৯ জন সাংসদ রয়েছেন। তবে, রাজ্যসভায় ছয়টি এবং লোকসভায় একটি আসন শূন্য থাকায় মোট সাংসদ সংখ্যা ৭৮১। এনডিএ-র কাছে ৪২৫ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে, যার মধ্যে বিজেপি একাই ৩৪২ জন সাংসদ নিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
এছাড়া, ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির (ওয়াইএসআরসিপি) ১১ জন সাংসদ এনডিএ প্রার্থী রাধাকৃষ্ণনকে সমর্থন করছে, যা তাদের মোট সমর্থনকে ৪৩৬-এ নিয়ে যায়। অন্যদিকে, বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকের কাছে ৩২৪ জন সাংসদের সমর্থন রয়েছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৯১ ভোট, তবে বিজেডি, বিআরএস এবং শিরোমণি অকালি দল (এসএডি)-এর মতো দলগুলি ভোটদানে বিরত থাকার ঘোষণা দেওয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার সংখ্যা ৩৮৬-এ নেমে এসেছে।
এনডিএ-র প্রার্থী সিপি রাধাকৃষ্ণন একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসক। তিনি তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর থেকে দু’বারের লোকসভা সাংসদ এবং বর্তমানে মহারাষ্ট্রের গভর্নর। ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তামিলনাড়ু বিজেপি সভাপতি হিসেবে তিনি দক্ষিণ ভারতে দলের ভিত্তি মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাধাকৃষ্ণনের প্রার্থীতার প্রশংসা করে বলেছেন, তিনি একজন নির্মল নেতা যিনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
বিরোধীদের প্রার্থী বি সুদর্শন রেড্ডি একজন প্রাক্তন সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি, যিনি ২০১১ সালে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য পরিচিত, বিশেষ করে সালওয়া জুডুম মামলায় রাষ্ট্র-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীকে অসাংবিধানিক ঘোষণা এবং কালো টাকার তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রায়ের জন্য। তিনি এই নির্বাচনকে গণতন্ত্রের চেতনা রক্ষার লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং সাংসদদের দলীয় সীমানা ছাড়িয়ে বিবেকের ভিত্তিতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এনডিএ-র সংখ্যাগত শক্তি তাদের প্রার্থীকে জয়ের দিকে এগিয়ে রেখেছে। বিজেপি নেতারা, যেমন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী চিরাগ পাসওয়ান এবং প্রফুল প্যাটেল, দাবি করেছেন যে বিরোধী শিবিরের কিছু সাংসদ এনডিএ-র পক্ষে ক্রস-ভোটিং করতে পারেন।
তবে, বিরোধী নেতা শিবসেনা (ইউবিটি)-র প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী এবং সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব আশা প্রকাশ করেছেন যে সুদর্শন রেড্ডির সাংবিধানিক অঙ্গীকারের প্রতি সমর্থন তাদের পক্ষে ভোট আকর্ষণ করবে। সুদর্শন রেড্ডি নিজে ক্রস-ভোটিংয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেছেন, তবে তিনি বলেছেন যে তিনি মানুষের বিবেক জাগ্রত করতে চান।
ভোটগ্রহণ নতুন সংসদ ভবনের ভাসুধা কক্ষে (রুম নং এফ-১০১) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাংসদরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পাশে ‘১’ লিখে ভোট দিচ্ছেন। ভোট অবৈধ হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে উভয় জোটই তাদের সাংসদদের জন্য মক পোল এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল।
মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি, তোলপাড় প্রশাসন
এনডিএ-র পক্ষে কিরেন রিজিজু, রাম মোহন নাইডু এবং শ্রীকান্ত শিন্ডে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, আর বিরোধীদের পক্ষে সৈয়দ নাসির হুসেন, মানিকম টেগোর এবং শতাব্দী রায় ভোট পর্যবেক্ষণ করছেন।