ডিজিটাল গ্রেফতারির ফাঁদে পড়ে ১৪ লক্ষ টাকা হারালেন উপাচার্য, তদন্তে পুলিশ

ওড়িশার বেরহামপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গীতাঞ্জলি দাসের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, তাকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নামে ফোন করে ১৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।…

Vice Chancellor of Odisha University Loses 14 Lakhs in Digital Arrest Scam

ওড়িশার বেরহামপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গীতাঞ্জলি দাসের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, তাকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর নামে ফোন করে ১৪ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুলিশের সাইবার অপরাধদমন শাখা এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে এবং প্রতারকদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন গীতাঞ্জলি দাসের কাছে একটি ফোন আসে, যেখানে অপর প্রান্ত থেকে নিজেকে ইডি (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট) আধিকারিক হিসেবে পরিচয় দেয় এক পুরুষ কণ্ঠ। ফোনে বলা হয়, অধ্যাপিকার নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাঠানো হয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ভয় পেয়ে যান গীতাঞ্জলি দাস। ফোনকলে তাঁকে জানানো হয়, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ইডি মামলা দায়ের করেছে এবং তাকে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ করা হবে।

প্রতারকরা দাবি করে, যদি ১৪ লক্ষ টাকা দেয়া হয়, তাহলে তাঁকে জামিনে ছাড়া হবে। ভয় ও বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে ওই মহিলা টাকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গীতাঞ্জলি দাস ওই টাকা একটি নির্দিষ্ট ব্যাংক অ্যাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন, যেমনটি প্রতারকরা তাকে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু টাকা পাঠানোর পর থেকে প্রতারকদের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, তিনি একটি ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পড়ে গেছেন এবং তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় গীতাঞ্জলি দাস সোমবার বেরহামপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং সাইবার অপরাধদমন শাখা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কাজ করছে। বেরহামপুর পুলিশ সুপার সারাভান বিবেক জানিয়েছেন, এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত প্রতারকদের খোঁজে অভিযান শুরু হয়েছে।

এটি নতুন ধরনের সাইবার প্রতারণার একটি উদাহরণ, যা গত কয়েক মাসে খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ বা ‘ডিজিটাল গ্রেফতারি’ নামক এই প্রতারণার পদ্ধতিটি ভুক্তভোগীদের বিভ্রান্ত করে টাকা আদায় করে নেয়। যদিও এর নাম গ্রেফতারি হলেও, এর সঙ্গে কোনও বাস্তব গ্রেফতারির সম্পর্ক নেই। প্রতারকরা সিবিআই, ইডি, নারকোটিক্স, আরবিআই বা শুল্ক এবং আয়কর বিভাগের আধিকারিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। তাদের কৌশল হলো, একটি কাল্পনিক মামলার ভয়ে ভুক্তভোগীকে তাদের পকেট থেকে টাকা বের করে আনতে বাধ্য করা।

Advertisements

সরকার এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তবে এখনও অনেকেই এই ধরনের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে যারা সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে অজানা, তারা সহজেই প্রতারকদের শিকার হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও সাইবার অপরাধের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে এবং এটি নিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।

এভাবে ডিজিটাল প্রতারণা দিন দিন বাড়ছে, এবং এটি সাধারণ মানুষের জন্য এক বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, সাইবার প্রতারণা থেকে বাঁচতে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে এমন ফোন কল বা মেসেজের প্রতিক্রিয়া দিতে গেলে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং সন্দেহ হলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।