ভারতের রেলপথে উন্নয়নের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ যুক্ত হতে চলেছে। বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেনের (Vande Bharat Sleeper Trains) প্রথম প্রোটোটাইপ প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তা শীঘ্রই পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। এই বিষয়ে সংসদের রাজ্যসভায় লিখিত উত্তর দিয়ে তথ্য জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। তিনি বলেন, পরীক্ষার সফল সমাপ্তির উপর নির্ভর করে এই ট্রেনের চালু হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হবে।
১৬টি বন্দে ভারত পরিষেবা চালু তামিলনাড়ুতে
মন্ত্রী আরও জানান, ডিসেম্বর ২, ২০২৪ পর্যন্ত ভারতের রেলপথে মোট ১৩৬টি মাঝারি দূরত্বের বন্দে ভারত ট্রেন চালানো হচ্ছে। এগুলির মধ্যে ১৬টি ট্রেন তামিলনাড়ুর বিভিন্ন স্টেশনের মধ্যে যাত্রী পরিবহন করছে। দীর্ঘতম দূরত্বের বন্দে ভারত ট্রেনটি দিল্লি থেকে বারাণসী পর্যন্ত চলাচল করে, যা ৭৭১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে।
তিনি আরও বলেন, নতুন ট্রেন পরিষেবা, যেমন বন্দে ভারত এবং এর স্লিপার সংস্করণ, ভারতীয় রেলওয়েতে একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি ট্রাফিকের যৌক্তিকতা, অপারেশনাল বাস্তবতা এবং প্রয়োজনীয় সম্পদের উপর ভিত্তি করে চালু করা হয়।
বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেনের বৈশিষ্ট্য
নতুন প্রজন্মের এই বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেনগুলি বিশেষ কিছু উন্নত বৈশিষ্ট্য ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এগুলি আধুনিক প্রযুক্তি এবং যাত্রীদের সুরক্ষা ও আরামের উপর বিশেষ জোর দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। এর কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো:
- কবচ প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত: দুর্ঘটনার সম্ভাবনা হ্রাস করার জন্য উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা।
- ফায়ার সেফটি মানদণ্ড: EN-45545 HL3 ফায়ার সেফটি মান মেনে তৈরি।
- ক্র্যাশওয়ার্দি নকশা: ট্রেনের বডি ক্র্যাশ প্রতিরোধে সক্ষম।
- জার্ক-ফ্রি সংযোজন: আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজক এবং অ্যান্টি-ক্লাইমার্স ব্যবহৃত।
- পুনঃউৎপাদনশীল ব্রেকিং সিস্টেম: এটি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কার্যকর।
- উচ্চ গতির ট্রেন: দ্রুত গতির পাশাপাশি তৎপর ব্রেকিং এবং অ্যাক্সিলারেশনের ক্ষমতা।
- ইমার্জেন্সি টকব্যাক ইউনিট: জরুরি অবস্থায় যাত্রীদের ট্রেন ম্যানেজার বা লোকো পাইলটের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা।
- প্রতিবন্ধী যাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা: সীমিত গতিশীলতার যাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা টয়লেট।
- অটোমেটিক দরজা এবং প্রশস্ত গ্যাংওয়ে: কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় প্লাগ ডোর এবং প্রশস্ত পথ।
- আরামদায়ক বার্থের জন্য সিঁড়ি: উপরের বার্থে ওঠার জন্য বিশেষ নকশার সিঁড়ি।
- কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত মনিটরিং সিস্টেম: শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং আলোসহ যাত্রী পরিষেবাগুলির পর্যবেক্ষণের জন্য।
- সিসিটিভি নজরদারি: ট্রেনের প্রতিটি কোচে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো।
পরীক্ষার সফলতার অপেক্ষা
এই বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেনের প্রথম প্রোটোটাইপ তৈরি শেষ হয়েছে। এখন এটি মাঠপর্যায়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। মন্ত্রী বৈষ্ণবের মতে, পরীক্ষার সফল সমাপ্তির পরই এই ট্রেন যাত্রী পরিবহনের জন্য চালু করা হবে।
ভারতের রেলপথ ব্যবস্থার জন্য এই উন্নয়ন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বন্দে ভারত ট্রেন পরিষেবা ইতিমধ্যেই যাত্রীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছে। স্লিপার সংস্করণটি চালু হলে দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রীদের জন্য এটি আরও সুবিধাজনক হবে।
ভারতের রেলপথের ক্রমবর্ধমান আধুনিকীকরণ এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিচ্ছে। বন্দে ভারত স্লিপার ট্রেন সেই উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।