মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স (vance) জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করে যে ভারত জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার জবাবে এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে, যা বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের দিকে না যায়। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের উচিত ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করে তাদের ভূখণ্ডে কখনও কখনও সক্রিয় সন্ত্রাসীদের “শিকার” করতে সহায়তা করা।
ভ্যান্স এই মন্তব্য করেন (vance)
বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজের ‘স্পেশাল রিপোর্ট উইথ ব্রেট বেয়ার’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স (vance) এই মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, এই হামলার সময় ভ্যান্স তার পরিবারের সঙ্গে ভারতে চার দিনের সফরে ছিলেন। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটি ছিল কাশ্মীর উপত্যকার সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
পহেলগাঁও হামলার পটভূমি
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি একটি মনোরম তৃণভূমিতে গুলি চালায়, যার ফলে ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পর্যটক। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার প্রক্সি গ্রুপ দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যদিও পরে তারা এই দায় অস্বীকার করে।
ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানের পরোক্ষ সমর্থনের অভিযোগ তুলেছে, যা পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়িয়েছে, এবং ভারত ইতিমধ্যেই বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ৬৫ বছরের পুরোনো সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করা, পাকিস্তানি সামরিক অ্যাটাশেদের বহিষ্কার, আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধ এবং ভারতীয় আকাশসীমা পাকিস্তানি বিমানের জন্য বন্ধ করে দেওয়া।
সুপার কাপের ফাইনালে গোয়া-জামশেদপুর, তরুণদের লড়াইয়ে মুগ্ধ কোচরা
ভ্যান্সের মন্তব্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
ফক্স নিউজের সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স (vance) বলেন, “আমাদের আশা, ভারত এই জঙ্গি হামলার জবাব এমনভাবে দেবে যাতে বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের সৃষ্টি না হয়। এবং আমরা আশা করি, পাকিস্তান, যতটুকু তারা দায়ী, ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করবে যাতে তাদের ভূখণ্ডে কখনও কখনও সক্রিয় সন্ত্রাসীরা শিকার হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
এই মন্তব্য পহেলগাঁও হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ। ভ্যান্স (vance) এই হামলার সময় ভারতে ছিলেন এবং তিনি ঘটনার পরপরই এক্স-এ একটি পোস্টে হামলার নিন্দা করে ভুক্তভোগীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “আমি এবং উষা এই ভয়াবহ হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানাই। গত কয়েকদিনে আমরা এই দেশ ও এর মানুষের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি।”
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসও এই হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ণ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে রয়েছে এবং পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ
পহেলগাঁও হামলার পর ভারত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সশস্ত্র বাহিনীকে “পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা” দিয়েছেন, যাতে তারা হামলার জবাবে সময়, লক্ষ্য এবং পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে এই হামলা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য দেশগুলির কাছে এই হামলার সীমান্ত-সংযোগ নিয়ে তথ্য প্রচার করছে, যার মধ্যে ডেনমার্কের মতো দেশও রয়েছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তামন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা ৯০-এর দশক থেকে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ চালিয়ে আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতার নীতিতে কঠোরভাবে লড়াই করছি। সন্ত্রাসীরা ভাববেন না যে তারা আমাদের নাগরিকদের জীবন কেড়ে জিতে গেছে।” তিনি সন্ত্রাসীদের “শিকার” করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
পাকিস্তানের অবস্থান ও উত্তেজনা
পাকিস্তান এই হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার দাবি করেছেন, ভারত আগামী ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
পাকিস্তান সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করেছে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। লাইন অফ কন্ট্রোল (এলওসি)-এ উভয় দেশের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও বেড়েছে, যা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক সমর্থন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
এই হামলার পর ভারত আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ ২৩টি FATF সদস্য রাষ্ট্র থেকে শোকবার্তা পাওয়া গেছে। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলে হামলায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ভ্যান্সের (vance) মন্তব্য এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরে। তবে, ভারতের কঠোর পদক্ষেপ এবং পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে উভয় দেশকে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আগামী দিনগুলো এই উত্তেজনা কীভাবে সমাধান হবে তা নির্ধারণ করবে, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।