উত্তরকাশি: বর্ষার মরসুমে ফের হিমালয়ের বুকে প্রাকৃতিক তাণ্ডব। মঙ্গলবার ভোররাতে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার থারালি গ্রামে আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টিতে নামে বিপর্যয়৷ ভয়াবহ ধস নামে পাহাড়ে (uttarkashi cloudburst landslide)। স্থানীয় একটি নালা হঠাৎই বিপুল জলস্রোতে ফুলে ওঠে এবং বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ধ্বংসের চিহ্ন রেখে যায়। আতঙ্কিত পর্যটকদের মোবাইলে ধরা পড়েছে সেই ভয়াল দৃশ্য, পাহাড় থেকে ধেয়ে আসছে জলপ্রবাহ, সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ ও গাছপালা।
জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর (DDMA) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর নেই বলে জানিয়েছে। সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতিরও কোনও নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। বিপর্যস্ত এলাকা মুকবা ও গঙ্গোত্রী ধামের কাছাকাছি, গঙ্গাজির শীতকালীন আসনের সন্নিকটে হওয়ায় আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ক্লাউডব্রস্টের ঠিক পরপরই পাহাড়ি ঢালু অঞ্চল থেকে অস্বাভাবিক গতিতে নেমে আসে জল, যা মুহূর্তে গিলে নেয় ঝোপঝাড় ও ছড়িয়ে থাকা উপাদান। প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী প্রস্তুত অবস্থায় রাখা হয়েছে।
এদিকে শুধু উত্তরাখণ্ড নয়, প্রবল বর্ষণে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশও। সোমবার একদিনেই রাজ্যের ৩১০টি সড়ক, যার মধ্যে রয়েছে একটি জাতীয় সড়কও, বন্ধ হয়ে যায় ধস ও জলপথে প্রতিবন্ধকতার কারণে। মান্ডি জেলায় একটি গাড়ি খাদে পড়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের।
রবিবার রাতে শিমলার পন্থাঘাটি এলাকায় ধসে বন্ধ হয়ে যায় মেহলি-শোগি বাইপাস। আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) সোমবার ও মঙ্গলবার হিমাচল জুড়ে ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ জারি করেছে—যার অর্থ হল, বিক্ষিপ্ত এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বর্ষায় হিমাচল প্রদেশে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১০৩ জনের। নিখোঁজ রয়েছেন ৩৬ জন। মৃতদের মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে জলে ডুবে, ১৯ জন দুর্ঘটনাজনিত পতনে, ১৭ জন ক্লাউডব্রস্টে, ৮ জন ফ্ল্যাশ ফ্লাডে এবং ৬ জন ধসে প্রাণ হারিয়েছেন।
উত্তর ভারতের পার্বত্য রাজ্যগুলিতে বর্ষার এই প্রকোপ নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের। পর্যটন নির্ভর অর্থনীতি যেমন ক্ষতির মুখে, তেমনই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিকাঠামোর প্রশ্নও ফের উঠে আসছে।