উত্তরাখণ্ডে: হারিদ্বারের মানসা দেবী মন্দিরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক পদদলনের (Haridwar Stampede) ঘটনার পর তৎপর উত্তরাখণ্ড সরকার। রাজ্যের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে পর্যটন দপ্তরকে ৯ দফার একটি বিস্তারিত মাস্টার প্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, “উত্তরাখণ্ডে প্রতি বছর কোটি কোটি তীর্থযাত্রী আসেন। তাঁদের নিরাপত্তা ও সুবিধার জন্য একটি সার্বিক পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে যাতে তীর্থযাত্রা অভিজ্ঞতা আরও সুষ্ঠু ও নিরাপদ হয়।” একইসঙ্গে তিনি জানান, ধর্মীয় স্থানগুলির আশপাশে জনপরিসেবা উন্নয়নের মাধ্যমে তীর্থযাত্রা আরও সুশৃঙ্খল ও আধুনিক করে তোলা হবে।
পর্যটন দপ্তরকে অবিলম্বে এই পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব আর কে সুধাংশু। ইতিমধ্যেই বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে মন্দিরভিত্তিক ভিড় নিয়ন্ত্রণ ও পরিকাঠামোগত বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়েছে।
প্রস্তাবিত মাস্টার প্ল্যানের কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্য:
আধুনিক ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা: উৎসব ও তীর্থ ঋতুর সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা থাকবে।
সুনির্দিষ্ট ক্যারিয়িং ক্যাপাসিটি নির্ধারণ: প্রতিটি তীর্থক্ষেত্রের ধারণক্ষমতা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হবে।
স্বতন্ত্র প্রবেশ ও প্রস্থান পথ: দর্শনার্থীদের চলাচল আরও মসৃণ করতে আলাদা প্রবেশ ও বাহির পথ গড়ে তোলা হবে।
অপেক্ষাকক্ষ নির্মাণ: মূল মন্দির প্রাঙ্গণের বাইরে বিশ্রামের জায়গা থাকবে যাতে ভিড় না জমে।
জরুরি পরিষেবা ও নিরাপত্তা:
দুর্ঘটনার সময় দ্রুত উদ্ধার ও সুরক্ষার জন্য ইমার্জেন্সি ইভাকুয়েশন সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
তীর্থযাত্রীদের দিকনির্দেশ ও সাহায্যের জন্য গাইডেন্স সিস্টেম চালু হবে।
ট্রাফিক সমস্যা রোধে পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।
নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হবে যাতে কোনও রকম বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
মুখ্যমন্ত্রী ধামি নিজে হারিদ্বার গিয়ে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন। গারওয়াল ও কুমায়ুন বিভাগের কমিশনারদের এই প্রকল্পে সরাসরি যুক্ত করা হয়েছে এবং অবৈধ দখলদারি সরানোর দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম পর্যায়ে মানসা দেবী, চণ্ডী দেবী, নীলকণ্ঠ মহাদেব, কৈঁচী ধাম ও পূর্ণাগিরি—এই পাঁচটি বড় ধর্মস্থানকে ফোকাস করে বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ চলছে। গারওয়াল ও কুমায়ুনের বিভাগীয় কমিশনারদের এই প্রক্রিয়ার তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভিড় নিয়ন্ত্রণ, কাঠামোগত সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তাঁদের পরামর্শেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, উত্তরাখণ্ডে অতীতেও একাধিকবার মর্মান্তিক পদদলনের ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ জুলাই হরিদ্বারের হাঠি ব্রিজে, ২০১০ সালের ১৪ এপ্রিল মহাকুম্ভে এবং ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর শান্তিকুঞ্জের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে এবারের মাস্টার প্ল্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছে প্রশাসন।