উত্তরাখণ্ড সরকার আজ এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামির নির্দেশে রাজ্যের মাদ্রাসা বোর্ড আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। ফলে উত্তরাখণ্ড ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে মাদ্রাসা বোর্ড সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার নজির স্থাপন করল। এই সিদ্ধান্ত দেশের শিক্ষা কাঠামোয় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারের মতে, শিক্ষাব্যবস্থা ধর্ম নয়, বরং বিজ্ঞান, যুক্তি ও আধুনিকতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত। এই নীতিতে বিশ্বাস রেখেই রাজ্য সরকার মাদ্রাসাগুলিকে মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ধামি স্পষ্ট বলেছেন, “দেশের প্রতিটি শিশুর সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। শিক্ষা কখনও ধর্মীয় সীমারেখায় আবদ্ধ থাকতে পারে না। একক ও সমান শিক্ষানীতিই নতুন ভারতের ভবিষ্যৎ।”
এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের প্রায় ৪০০টিরও বেশি মাদ্রাসা এখন শিক্ষা বিভাগের আওতায় আসবে। সরকার জানিয়েছে, ঐসব মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এখন থেকে জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP 2020)-র কাঠামোর মধ্যে পড়াশোনা করতে হবে। অর্থাৎ, গণিত, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ইংরেজি ও অন্যান্য আধুনিক বিষয়গুলিই হবে শিক্ষার মূল ভিত্তি।
বিরোধী দলগুলির একাংশ এই পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করলেও, রাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের এক বড় অংশ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এতদিন মাদ্রাসা শিক্ষা ধর্মীয় গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ ছিল, যা অনেক ছাত্রছাত্রীকে মূলধারার প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখত। এখন সেই বাধা দূর হচ্ছে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদক্ষেপটি শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্কারেরও সূচনা। একক শিক্ষানীতি চালু হলে সামাজিক বৈষম্য অনেকটাই কমবে। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে “যেখানে শিক্ষা ধর্মভিত্তিক নয়, সেখানে শিশুরা যৌক্তিক চিন্তায় বেড়ে ওঠে। এটা আধুনিক ভারতের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক দিক।”
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মাদ্রাসা বোর্ড বিলুপ্ত হলেও শিক্ষক ও কর্মীদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তাদেরকে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরে পুনর্নিয়োগের প্রক্রিয়া চালু থাকবে। পাশাপাশি, যে ছাত্রছাত্রীরা বর্তমানে মাদ্রাসায় পড়ছে, তাদের জন্য বিশেষ স্থানান্তর ব্যবস্থা ও ব্রিজ কোর্সের ব্যবস্থা করা হবে, যাতে কেউ শিক্ষার বাইরে না পড়ে।
উত্তরাখণ্ড সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। নতুন ভারতের শিক্ষা নীতি ধর্মীয় প্রাচীর ভেঙে একটি ঐক্যবদ্ধ, বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনের পথে এগোচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে অন্যান্য রাজ্যের জন্যও উদাহরণ হতে পারে — যেখানে শিক্ষা হবে ধর্মমুক্ত, বৈজ্ঞানিক ও আধুনিকতার প্রতীক।