দেশে খারাপ ব্যবহারের শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ

উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh), ভারতের জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য, তার নাগরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশে একটি উদ্বেগজনক অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্ডিয়া টুডের একটি সমীক্ষায়…

https://kolkata24x7.in/wp-content/uploads/2025/03/Yogi-2.jpg

উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh), ভারতের জনসংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বড় রাজ্য, তার নাগরিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশে একটি উদ্বেগজনক অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্ডিয়া টুডের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনগণের আচরণে সরকারি নিয়ম মানার প্রতি উদাসীনতা, ঘুষ প্রদানের প্রবণতা এবং কর ফাঁকির মতো বিষয়ে উত্তরপ্রদেশ শীর্ষে রয়েছে। এই জরিপে নাগরিক আচরণের বিভিন্ন দিক পরীক্ষা করা হয়েছে, যা রাজ্যের সামাজিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

টিকিটবিহীন যাত্রায় রেকর্ড
জরিপে নাগরিক আচরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে সরকারি নিয়ম মানার প্রবণতা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা পরিবহন ভাড়া ফাঁকি দেওয়ার বিরুদ্ধে মত দিলেও, বাস্তবে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতীয় রেলওয়ে ৩.৬ কোটি টিকিটবিহীন যাত্রার ঘটনা শনাক্ত করেছে, যার ফলে ২,২৩১.৭৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায় হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের মতো জনবহুল রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই তথ্য প্রশাসনের তরফে কার্যকর প্রয়োগের ব্যর্থতা এবং জনগণের মধ্যে দায়িত্ববোধের অভাবকে স্পষ্ট করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু জরিমানা আরোপ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না; এর জন্য সচেতনতা ও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।

   

আরো দেখুন ভারতে সামাজিক ব্যবহারের শীর্ষে অবিজেপি শাসিত তিন রাজ্য

ঘুষ প্রদানে শীর্ষে উত্তরপ্রদেশ
জরিপে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—৬১ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা কাজ করিয়ে নিতে ঘুষ দিতে ইচ্ছুক। এই তালিকায় উত্তরপ্রদেশ শীর্ষে রয়েছে। সরকারি কাজ, যেমন সম্পত্তি নিবন্ধন, পুলিশি সহায়তা বা পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়ে ঘুষ প্রদান এখানে একটি সাধারণ প্রথায় পরিণত হয়েছে। এই প্রবণতা সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতার অভাবকে প্রকাশ করে। উত্তরপ্রদেশে দুর্নীতির এই উচ্চ হার শুধু সাধারণ মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলছে না, বরং রাজ্যের উন্নয়নের পথেও বাধা সৃষ্টি করছে।

কর ফাঁকির প্রবণতা
জরিপে আরও দেখা গেছে, ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা সম্পত্তি সংক্রান্ত লেনদেনে কর ফাঁকি দিতে নগদ অর্থ প্রদানে ইচ্ছুক। উত্তরপ্রদেশে এই প্রবণতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কালো টাকার ব্যবহার এখানে একটি সাধারণ চর্চা। এই আচরণ শুধু সরকারের রাজস্বের উপর প্রভাব ফেলছে না, বরং অর্থনৈতিক স্বচ্ছতার ক্ষেত্রেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের প্রবণতা কমাতে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা জরুরি।

সামাজিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট
উত্তরপ্রদেশের এই খারাপ ব্যবহারের পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। রাজ্যের সাক্ষরতার হার জাতীয় গড়ের তুলনায় কম, যা ২০২১ সালের হিসেবে ৬৭ শতাংশ। শিক্ষার অভাবে সামাজিক সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া, রাজ্যে মহিলাদের প্রতি সহিংসতা, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এবং পুলিশি অত্যাচারের মতো ঘটনাও সামাজিক ব্যবহারের অবনতির জন্য দায়ী। উদাহরণস্বরূপ, মুজফ্ফরনগরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং হাথরাসে ধর্ষণের মতো ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সমালোচিত হয়েছে।

প্রশাসনের ভূমিকা ও সমালোচনা
যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন সরকার দাবি করে, তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে, পুলিশি এনকাউন্টার ও “বুলডোজার নীতি”র মতো বিতর্কিত পদক্ষেপ সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ করছে, এই নীতিগুলো সমাজে ভয় ও অবিশ্বাস বাড়াচ্ছে। সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, “সরকারের কঠোরতা শুধু প্রচারের জন্য, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই।”

সমাধানের পথ
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উত্তরপ্রদেশের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। সরকারি নিয়ম মানতে জনগণকে উৎসাহিত করতে প্রচারণা, ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এছাড়া, প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে নাগরিক আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে।

উত্তরপ্রদেশের নাগরিক ব্যবহারে যে ত্রুটি প্রকাশ পেয়েছে, তা শুধু রাজ্যের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়। টিকিটবিহীন যাত্রা, ঘুষ প্রদান এবং কর ফাঁকির মতো প্রবণতা থেকে মুক্তি পেতে সমাজ ও সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এই পরিস্থিতি উন্নত না হলে, রাজ্যের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে।