যোগী রাজ্য থেকে পঞ্জাবে গেল এক হাজার কুইন্টাল গমের বীজ

uttar-pradesh-sends-wheat-seeds-to-punjab-flood-relief

লখনৌ: প্রকৃতির ক্রুর আঘাতে পঞ্জাবের কৃষকরা এখনো সাম্যের লড়াই করছেন। এই বছরের মনসুনের ভারী বর্ষণ এবং বন্যায় প্রায় পাঁচ লক্ষ একর ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি কৃষকদের হাত থেকে খসে পড়েছে তাদের স্বপ্নের ফসল, বিশেষ করে গমের বীজ। এমন সময়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক উদার উদ্যোগ পাঞ্জাবের কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাতে এগিয়ে এসেছে।

Advertisements

আজ সকালে উত্তরপ্রদেশের কৃষি বিভাগের অধীনে এক হাজার কুইন্টাল উচ্চমানের গমের বীজ লোড করে ট্রাকগুলো রওনা হয়েছে পঞ্জাবের দিকে। এই সাহায্যের খবর ছড়াতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষক সংগঠনগুলোর নেতারা ধন্যবাদ জানিয়ে উঠেছেন, বলছেন এটি শুধু বীজ নয়, আশার এক নতুন আলো।উত্তরপ্রদেশের কৃষি রাজ্যমন্ত্রী বলদেব সিংহ আলুখের নেতৃত্বে এই উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে নারী বৈষম্য চরমে? অবাক করা রিপোর্ট UNESCO র

গত রবিবার লখনৌয়ের পিডব্লিউডি গেস্ট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “পাঞ্জাবের বন্যায় কৃষকরা শুধু ফসল হারাননি, তাদের ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তাও বিপন্ন হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশের কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে আমরা এই এক হাজার কুইন্টাল বীজ পাঞ্জাবের কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি, যাতে তারা আসন্ন রবি মৌসুমে নতুন করে শুরু করতে পারেন।

এটি আমাদের দুই রাজ্যের মধ্যে ভাইচারার প্রতীক।” এই বীজগুলো উচ্চ উৎপাদনশীলতার জন্য পরিচিত কিছু জাতের, যেমন পিবিডব্লিউ ৮২৬, পিবিডব্লিউ ৮৬৯ এবং ডিবিডব্লিউ ২২২। এগুলো প্রতিরোধক্ষমতা সমৃদ্ধ, রোগ প্রতিরোধী এবং প্রতি হেক্টরে ৮০-১০০ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। উত্তরপ্রদেশের কান্নৌজ এবং অন্যান্য জেলার সরকারি বীজ ভান্ডার থেকে এই বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে, যা ৫০ শতাংশ সাবসিডিতে উৎপাদিত।

Advertisements

পাঞ্জাবের বন্যার ধ্বংসলীলা এই বছরের মনসুনকে এক অকল্পনীয় রূপ দিয়েছে। সতেজ সবুজ মাঠগুলো জলে ডুবে যাওয়ায় হাজার হাজার কৃষক পরিবারের চুলোটা জ্বলেনি। কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহাণের নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকার ইতিমধ্যে ৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করে দুই লক্ষ কুইন্টাল বীজের বিনামূল্যে সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে।

পাঞ্জাব সরকারও রবি ২০২৫-২৬ মৌসুমের জন্য পাঁচ লক্ষ একর জমির কৃষকদের মুক্ত বীজ এবং সাবসিডি দিচ্ছে। বন্যাকৃষকরা দুই হেক্টর পর্যন্ত বিনামূল্যে বীজ পাবেন, যাতে তারা পুনর্বাসনের এই যাত্রায় পিছিয়ে না পড়েন। এই সব উদ্যোগের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের এই অবদান যেন একটি সোনালি অধ্যায় যোগ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বীজ সরবরাহ পাঞ্জাবের গম উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গমের ভূমিকা অপরিসীম, এবং এই সাহায্যে সেই চেইনটি শক্তিশালী হবে।

এই ঘটনা শুধু সরকারি সাহায্যের গল্প নয়, এটি ভারতের ফেডারেল স্ট্রাকচারের এক জ্বলজ্বল উদাহরণ। উত্তরপ্রদেশ, যা নিজেই গম উৎপাদনে শীর্ষস্থানীয়, তার সম্পদ শেয়ার করছে প্রতিবেশী রাজ্যের সঙ্গে। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, এই বীজগুলো ব্যবহার করে কৃষকরা প্রোটিন, জিঙ্ক এবং আয়রন সমৃদ্ধ ফসল পাবেন, যা পুষ্টি সুরক্ষার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

পাঞ্জাবের কৃষক নেতা বলরাম সিংহ বলেন, “উত্তরপ্রদেশের এই সাহায্য আমাদের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমরা প্রত্যেকে জানি, কৃষকের লড়াই শুধু তার নয়, সমগ্র দেশের। এখন আমরা নতুন করে বীজ বপন করব, এবং আশা করছি, আগামী ফসল আমাদের হারানোটুকু ফিরিয়ে দেবে।”