যোগী রাজ্যে টার্গেট বৃহন্নলারা! জোর করে চলছে ধর্মান্তকরণ

uttar-pradesh-kinnar-forced-conversion-islam-pratapgarh

লখনউ: উত্তরপ্রদেশে ফের এক চাঞ্চল্যকর ধর্মান্তকরণের অভিযোগ উঠল। এবার লক্ষ্যবস্তু বৃহন্নলা সম্প্রদায়। প্রতাপগড় জেলার এক বৃহন্নলা বৈষ্ণো কিন্নর অঞ্জলি সখী অভিযোগ করেছেন, তাঁকে এবং আরও অনেক হিন্দু বৃহন্নলাকে জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়েছে।

Advertisements

অঞ্জলির দাবি, তাঁকে আট বছর আগে অপহরণ করে একটি গোষ্ঠী জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করে। সেই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে ছিলেন কিন্নর সমাজেরই এক নেত্রী নারগিস। অঞ্জলি বলেন, “আমি একজন হিন্দু ছিলাম। কিন্তু আট বছর আগে আমাকে অপহরণ করে জোর করে ‘নিকাহ’ করানো হয়। বলা হয়, এখন থেকে ইসলাম মেনে চলতে হবে। আমার প্রতিবাদে আমাকে মারধরও করা হয়।”

   

তিনি অভিযোগ করেন, এই চক্রটি শুধু তাঁকেই নয়, আরও বহু হিন্দু বৃহন্নলাকে টার্গেট করেছে। “আমাদের সমাজের দুর্বলতা, সামাজিক বঞ্চনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে কাজে লাগিয়ে তারা ধর্মান্তকরণের জাল ফেলছে,” বলেন অঞ্জলি।

অঞ্জলি সম্প্রতি প্রতাপগড় থানায় নারগিসের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগ, তিনি পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর থেকেই একাধিকবার মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছেন। “আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, যেন আমার নিরাপত্তা দেওয়া হয়। আমি আর ভয় পেতে চাই না,” বলেন তিনি।

ঘটনাটি সামনে আসতেই এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বিজেপি ও হিন্দু সংগঠনগুলো প্রশাসনের কাছে কড়া পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, “বৃহন্নলাদের মতো সংবেদনশীল সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।” এক বিজেপি নেতা বলেন, “মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশের পর এখন উত্তরপ্রদেশেও একই চক্র সক্রিয়। এই ধরনের ধর্মান্তকরণ শুধুমাত্র অবৈধ নয়, এটি সমাজের ভেতর বিভাজন তৈরি করছে। আমরা চাই এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হোক।”

Advertisements

প্রতাপগড়ের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, “অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত নারগিসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে অন্যান্য রাজ্যেও যোগাযোগ করা হবে, কারণ এটি বৃহত্তর চক্রের অংশ হতে পারে।” সূত্রের খবর, অঞ্জলির অভিযোগের পর অন্য কয়েকজন বৃহন্নলাও গোপনে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের দাবি, ধর্মান্তকরণের নামে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল বাড়ি, টাকা, এবং নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে তাদের ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ঘটনাটির নিন্দা করেছে। তাদের বক্তব্য, “ধর্মান্তকরণ হোক বা জোরপূর্বক কোনো সামাজিক চাপ, তা সম্পূর্ণ অমানবিক। বৃহন্নলা সমাজকে আরও সুরক্ষিত করা জরুরি।” উল্লেখযোগ্যভাবে, উত্তরপ্রদেশ সরকার আগে থেকেই “বেআইনি ধর্মান্তর নিষিদ্ধ আইন” প্রয়োগ করেছে, যার অধীনে জোর করে বা প্রতারণার মাধ্যমে ধর্মান্তর ঘটালে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

এবারের ঘটনায় সেই আইন প্রয়োগ হতে পারে বলেই মনে করছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা। অঞ্জলির কথায়, “আমরা সমাজের বাইরে থাকা মানুষ। কেউ আমাদের কথা শুনতে চায় না। কিন্তু আমি চাই, আমার অভিযোগের মাধ্যমে অন্য কেউ যেন এই ফাঁদে না পড়ে।” এই ঘটনার পর প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। প্রশ্ন উঠছে সমাজের প্রান্তিক এক সম্প্রদায়ের মানুষকে লক্ষ্য করে কি কোনও সংগঠিত ধর্মান্তকরণ চক্র কাজ করছে? উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সেই দিকেই নজর দিচ্ছে।