লখনউ: উত্তরপ্রদেশের লখনউ জেলার কাকোরি এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা (Road Accident)। হারদোই থেকে আসা উত্তরপ্রদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহণের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এই ঘটনায় অন্তত পাঁচজন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে এবং আরও দশজনের বেশি গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বাসটি অতিরিক্ত গতিতে চলছিল এবং রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় চালক গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হন। নির্মীয়মাণ রাস্তার পাশে জল ছিটানো হচ্ছিল ধুলো আটকাতে। সেই সময়ই হঠাৎ বাসটি প্রথমে একটি জলের ট্যাঙ্কারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রায় ২০ ফুট গভীর খাদে গিয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় মানুষজন ছুটে আসেন। তারা আহত যাত্রীদের উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। পুলিশ কমিশনার অমরেন্দ্র সিং সেনগার জানান, “প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, পাঁচজন যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন এবং আহতদের দ্রুত কাকোরি কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।” পরে গুরুতর আহতদের লখনউর বড় সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বাসে প্রায় ৪০ জন যাত্রী ছিলেন। দুর্ঘটনার পর অনেক যাত্রী আটকে পড়েছিলেন বাসের ভেতরে। দমকল কর্মীরা গ্যাস কাটার যন্ত্র দিয়ে গাড়ির জানলা ও দরজা ভেঙে যাত্রীদের বের করেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
দুর্ঘটনার খবর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের কাছে পৌঁছতেই তিনি গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক কর্তাদের আহতদের চিকিৎসার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আহতদের আরোগ্য কামনা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে যে সরকার প্রয়োজনে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তাও করবে।
অন্যদিকে দুর্ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই রাস্তায় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে কারণ নির্মীয়মাণ রাস্তার পাশে সতর্কীকরণ বোর্ড এবং পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। এমনকি পুলিশ প্রশাসনেরও অবহেলার কারণে ঝুঁকি বাড়ছে।
রাস্তার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং নির্মীয়মাণ সড়কে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা রাখা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি রাতের সময় অতিরিক্ত সতর্কতার প্রয়োজন।
এই করুণ ঘটনার জেরে নিহতদের পরিবার ভেঙে পড়েছেন। আহত যাত্রীরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই শারীরিকভাবে গুরুতর জখম। পুলিশ জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে এবং চালকের গাফিলতি বা অন্য কোনও ত্রুটি থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।