চিনের মুখে ঝামা ঘষে লামার পাশে আমেরিকা! লাভের কড়ি গুনছে ভারত?

   তিব্বত নিয়ে এবার কি আরও চাপে পড়তে চলেছে চিন সরকার? এতদিন এই ব্যাপারে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। কিন্তু এবার ভারতের পাশে হাজির বাইডেনও।…

A high-ranking delegation of the US administration met with the Dalai Lama
  

তিব্বত নিয়ে এবার কি আরও চাপে পড়তে চলেছে চিন সরকার? এতদিন এই ব্যাপারে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। কিন্তু এবার ভারতের পাশে হাজির বাইডেনও। আমেরিকা এবার নাক গলাচ্ছে তিব্বত ইস্যু নিয়ে। আর তাতেই ঘুম উড়েছে চিনা প্রেসিডেন্টের। ভারতে এসে পৌছে গিয়েছে আমেরিকার এক বিশেষ প্রতিনিধি দল। তারা ইতিমধ্যেই দেখা করে বৈঠকও সেরে ফেলেছেন তিব্বতের বিতর্কিত ধর্মগুরু দলাই লামার সাথে। সেই দলাই লামা, যাকে দেশদ্রোহী, বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে মনে করে চিনা সরকার। আর এতেই শিয়রে শমন দেখছে চিন প্রশাসন।

চিনের এই মুহূর্তে সব থেকে বড় মাথাব্যাথার কারণ হল আমেরিকার একটি বিল। যেটি সম্ভবত খুব তাড়াতাড়িই সই করতে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ‘তিব্বত রিসল্ভ অ্যাক্ট’ একটি এমন বিল যা তিব্বতের স্বাধীন সরকারের প্রতি মার্কিন সমর্থনের র সব থেকে বড় উদাহরণ। তিব্বত ও চিনের মধ্যে শতাব্দী প্রাচিন বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চিন ও দালাই লামার মধ্যে আলোচনাকেই সমর্থন করে আমেরিকা। তিব্বত সমস্যার শান্তি সমাধানই এই বিলের মূল লক্ষ্য বলে দাবি। এই বিল একবার যদি মার্কিন সেনেটে পাশ হয়ে যায়, তাহলে ২০১০ সালের বন্ধ হয়ে যাওয়া তিব্বত আলোচনা আবার শুরু হবে । আর এখানেই প্রবল আপত্তি চিনের। এই বিল পাশ না করবার জন্য রীতিমতন হুমকি দিয়েছে চিন।

   

এদিকে মার্কিন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি দল দলাই লামার সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই তাদের বক্তব্য ঘোষণা করে দিয়েছে। তাদের সোজাসুজি বক্তব্য, চিনের চোখ রাঙানিকে কোনভাবেই তারা পাত্তা দেবে না। দলাই লামাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে চিনের যে দাবি, সেটাও তারা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আপাতত ভারতের হিমাচলের ধর্মশালা থেকেই তিব্বতের সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছে। আর সেই ধর্মশালাতেই দলাই লামার সঙ্গে মিটিং করেছেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। যা বোঝা যাচ্ছে, তিব্বতের বিষয়ে ভারতের মতই একই অবস্থান নিতে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। আর এতেই চরম চাপে চিন সরকার।

প্রসঙ্গত এই প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছেন ন্যান্সি পেলসিও। ইনি সেই মার্কিন প্রতিনিধি, যার তাইওয়ান সফর ঘিরে রীতিমতো চিন-মার্কিন সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছিল। তাইওয়ানে চিনা আগ্রাসনের চরম নমুনা দেখা গিয়েছিল সেবার। রীতিমতন একটা যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাইওয়ান এবং চিনের মধ্যে।

এবার সেই প্রতিনিধিকেই দলাই লামার সঙ্গে দেখা করতে পাঠিয়ে ঘুরিয়ে কি চিনকে বার্তা দিল মার্কিন সরকার? অপরদিকে ভারতের কিন্তু এই মুহূর্তে অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থা। অরুণাচল ও একাধিক সীমান্তবর্তী এলাকাতে চিনা আগ্রাসনের পাল্টা হিসাবে ভারত পাশে পেয়ে গেল আমেরিকাকে। চিনের বিরুদ্ধে এখন কার্যত চারটি দেশের জোট তৈরি হয়ে গেল এরকমই অনেকে বলছেন। যার মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে ভারত আমেরিকা তো খুবই শক্তিশালী। ক্ষুদ্র দেশ হিসেবে পিছিয়ে নেই তাইওয়ানও।

তাহলে কি আগামী দিনে এশিয়ার রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের জন্ম হতে চলেছে? চিন চাপে পড়লে কিন্তু  চাপে পড়বে আমাদের আরেক পড়শি দেশ পাকিস্তানও। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার উপরে চিনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেটাকেও হয়তো অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অপরদিকে তিব্বত এবং তাইওয়ান দুক্ষেত্রেই যদি চিনা আগ্রাসন আটকানো যায়, তাহলে সেটা ভারতের ক্ষেত্রেও একটা নৈতিক জয় বলে মনে করা হবে। সব মিলিয়ে এখন ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে অনেকগুলি সম্ভাবনার দরজা খুলে গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। এখন দেখা যাক, কোন দরজা দিয়ে কোন বন্ধু কিভাবে হাত বাড়ায়।