পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার স্বামী, পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি

উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার (UP crime news) সাক্ষী থাকল দুই শিশু। নোয়ডার দাদরি গ্রামে নিজের স্ত্রীকে নির্মমভাবে খুন করলেন স্বামী। নিহত মহিলার…

উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার (UP crime news) সাক্ষী থাকল দুই শিশু। নোয়ডার দাদরি গ্রামে নিজের স্ত্রীকে নির্মমভাবে খুন করলেন স্বামী। নিহত মহিলার নাম চঞ্চল শর্মা (২৮) এবং অভিযুক্ত স্বামীর নাম সোনু শর্মা (৩৬)।

পুলিশ সূত্রে খবর, সোনু শর্মা গত দু’মাস ধরে বেকার ছিলেন। সেই কারণে সংসারে টানাপোড়েন শুরু হয়। অন্যদিকে চঞ্চল স্থানীয় একটি পিৎজা দোকানে চাকরি করতেন। স্বামী বারবার তাঁকে চাকরি ছাড়তে বললেও তিনি অস্বীকার করেন। সংসারের আর্থিক দায়িত্ব সামলানোর জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া তাঁর কাছে ছিল প্রয়োজনীয়। এই বিষয় নিয়েই দাম্পত্য জীবনে অশান্তি চরমে ওঠে।

   

সোনু মনে করতেন, চঞ্চল কর্মস্থলের এক সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। এই সন্দেহ থেকেই দাম্পত্যে শুরু হয় তিক্ততা। স্থানীয়দের মতে, প্রায় প্রতিদিনই দম্পতির ঝগড়ার শব্দ শোনা যেত। রবিবার সকালে ফের তর্ক শুরু হয় দু’জনের মধ্যে। উত্তেজনার মুহূর্তে সোনু প্রথমে স্ত্রীর মুখ কাপড় দিয়ে চেপে ধরেন, তারপর ধারালো ছুরি দিয়ে একাধিকবার আঘাত করেন।

চঞ্চলের আর্তচিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায় তাঁদের দুই সন্তান—একজন সাত বছরের মেয়ে এবং পাঁচ বছরের ছেলে। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেও সোনু তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন চঞ্চল।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর অভিযুক্ত সোনু নিজেই থানায় ফোন করে জানায়, সে নিজের স্ত্রীকে খুন করেছে। ফোন করার পর ঘটনাস্থল থেকে পালালেও পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

Advertisements

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোনু ও চঞ্চলের বিবাহ হয়েছিল আট বছর আগে। প্রথমদিকে তাঁদের সংসার সুখেই চলছিল। কিন্তু সোনুর চাকরি চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। চঞ্চল সংসার চালাতে দায়িত্ব নেন। কিন্তু সেই সঙ্গেই স্বামীর পরকীয়া সন্দেহ আরও গভীর হতে থাকে।

এই ঘটনার পর সমগ্র এলাকা স্তম্ভিত। প্রতিবেশীরা জানান, প্রায়ই তাঁদের ঝগড়া শুনতে পেতেন, তবে এমন ভয়াবহ পরিণতি হবে তা কেউ ভাবেননি। পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘পরকীয়া সন্দেহই মূল কারণ হিসেবে সামনে এসেছে। অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল গৃহহিংসা, মানসিক চাপ এবং দাম্পত্য সম্পর্কে অবিশ্বাস কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। পরিবার ও সমাজের জন্য এটি একটি গভীর বার্তা যে সহিংসতা কোনও সমস্যার সমাধান হতে পারে না।

বর্তমানে চঞ্চল শর্মার দুই সন্তান মা-বিহীন হয়ে পড়েছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় স্থানীয়রা। শিশুদের মানসিক আঘাত সামলাতে প্রশাসনের তরফে সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সমাজকর্মীরা। গ্রামবাসীরা বলছেন, ‘‘অভিযোগ থাকলে আদালত আছে, আইনের সাহায্য নেওয়া যেত। কিন্তু সন্তানের সামনে এমন নৃশংস খুন অমানবিক।’’

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News