লখনউ: উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের জন্য এ যেন দিওয়ালির আগেই সুখবর! মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার আখের রাজ্য পরামর্শমূল্য (State Advisory Price – SAP) প্রতি কুইন্টালে ৩০ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের প্রায় ৪৫ লক্ষ আখচাষি (Uttar Pradesh farmers) পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে বলে জানা গেছে।
সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রাথমিক জাতের আখের দাম ৩৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল করা হয়েছে, আর সাধারণ জাতের আখের দাম ৩৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৯০ টাকা প্রতি কুইন্টাল করা হয়েছে। নতুন দাম ২০২৫-২৬ সালের গুড়ো মৌসুম থেকে কার্যকর হবে।
আখ ও চিনিশিল্পমন্ত্রী লক্ষ্মী নারায়ণ চৌধুরী মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, “রাজ্যের কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে সরকার ধারাবাহিকভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত সাত বছরে আখের দাম মোট ৮৫ টাকা প্রতি কুইন্টাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা অতীতের যে কোনও সরকারের তুলনায় সর্বাধিক।”
উত্তরপ্রদেশে প্রায় ২.৯ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়। আখ রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নগদ ফসল। সরকারের এই সিদ্ধান্তে কৃষকরা মৌসুমের শুরু থেকেই আর্থিকভাবে কিছুটা স্বস্তি পাবেন। প্রাথমিক জাতের আখের দাম বৃদ্ধিতে কৃষকরা দ্রুত নগদ আয় করতে পারবেন, আর সাধারণ জাতের বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ মেটানো সহজ হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, মিলগেট পরিবহন কাটছাঁট ৪৫ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হলেও সর্বোচ্চ ৯ টাকা প্রতি কুইন্টালের বেশি কাটা যাবে না। চলতি মরশুমে ইতিমধ্যেই ৮৬ শতাংশ বকেয়া অর্থ কৃষকদের পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের মোট ১২০টি চিনি কল সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
গত ছয় বছরে রাজ্য সরকার ২.২ লক্ষ কোটি টাকার আখের বকেয়া পরিশোধ করেছে, যা কৃষক ও কল মালিকদের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে। এই শিল্পে প্রায় ৪২ লক্ষ পরিবার ও ৪৫ লক্ষ শ্রমিক সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত রয়েছেন।
চিনিশিল্প দফতরের লক্ষ্য, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে রাজ্যে চিনিশিল্পের মোট উৎপাদনমূল্য ১,৪১,৮৪৬ কোটি টাকায় পৌঁছানো এবং চিনি পুনরুদ্ধার হার (recovery rate) ৯.৫৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০.৫০ শতাংশে উন্নীত করা।
রাজ্যের বিভিন্ন কৃষক সংগঠন সরকারের এই সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক ও দূরদর্শী পদক্ষেপ” বলে বর্ণনা করেছে। তাদের মতে, এই বৃদ্ধি শুধু কৃষকদের আয়ই বাড়াবে না, বরং রাজ্যের সামগ্রিক গ্রামীণ অর্থনীতিকেও শক্তিশালী করবে।
চিনিশিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যে চিনিশিল্পের উৎপাদন, রপ্তানি এবং চাষিদের আর্থিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে। যোগী সরকারের ধারাবাহিক কৃষক-কেন্দ্রিক নীতির ফলেই উত্তরপ্রদেশ আবারও দেশের বৃহত্তম আখ উৎপাদক রাজ্য হিসেবে নিজের অবস্থান আরও সুসংহত করছে।


