দিল্লি বিস্ফোরণ তদন্তে সন্ত্রাস দমন শাখার নজরে মাদ্রাসা

up-ats-madrasa-scrutiny-delhi-blast-investigation-2025

লখনউ: যোগী রাজ্যে সন্ত্রাস দমন শাখার নজরে মাদ্রাসা। উত্তর প্রদেশ (UP ATS) অ্যান্টি-টেরোরিস্ট স্কোয়াড (ATS) মাদ্রাসাগুলোর ছাত্র-শিক্ষক ও ব্যবস্থাপকদের বিস্তারিত তথ্য চাওয়ার এক নির্দেশিকা জারি করেছে। এই পদক্ষেপ এসেছে গুজরাট ATS-এর পক্ষ থেকে এক বড় সন্ত্রাস মোকাবিলা অভিযানের আলোকে, যা দিল্লি এবং অন্যান্য শহরগুলোর সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।

Advertisements

গুজরাট ATS সম্প্রতি তিনজন জনকে গ্রেফতার করেছে । একটি শীর্ষ পরিচিতির মধ্যে রয়েছে ডাঃ আহমেদ মোহিউদ্দিন সৈয়েদ, যিনি দীর্ঘদিন ধরে “রিকিন” নামক অত্যন্ত প্রাণঘাতী বিষ প্রস্তুতির পরিকল্পনায় ছিলেন বলে অভিযোগ। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও রসায়নীয় উপাদান উদ্ধার করা হয়েছে, এবং তাদের পরিকল্পনায় ভারতজুড়ে হামলার তত্ত্বগত পরিকল্পনা ছিল। ATS-এর তথ্য অনুযায়ী, তারা গোপন যোগাযোগ ও অস্ত্র পৌঁছানোর জন্য আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছিল।

   

Image

এসএসসি পরীক্ষায় সিলেবাস বিভ্রাট, ৪০ নম্বরের পরীক্ষায় ৫০ নম্বরের সিলেবাস!

 গুজরাট ATS জানায়, গ্রেফতার হওয়া দুজন আজাদ সুলেমান শেখ এবং মহম্মদ সুহাইল খান একই মাদ্রাসায় পড়তেন, যা উত্তর প্রদেশের মুজাফরনগর এলাকায় অবস্থিত। এই তথ্য ATS-এর নজরদারি এবং তদন্তে মাদ্রাসার ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। সূত্র অনুযায়ী, ATS চায় সংশ্লিষ্ট মাদ্রাসার “সকল ছাত্র, শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপকের” নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর, যা তাদের মতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা যাচাইয়ের জন্য জরুরি।

এই নির্দেশিকা, যা ১৫ নভেম্বর ২০২৫-এর একটি ATS অফিসিয়াল চিঠি ভিত্তিক হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে, জনমতের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে অনেকেই এটিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ মনে করছেন বিশেষ করে সম্ভাব্য “র‍্যাডিকালাইজেশন হাব” হিসেবে সম্ভাব্য মাদ্রাসাগুলোর বিরুদ্ধে স্বচ্ছতা আনার জন্য।

অন্যদিকে, এমন পদক্ষেপ ধর্মীয় স্বাধীনতা, সামাজিক আস্থার সংকট এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতির বীজ বপনের সম্ভাবনা রাখে। প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে সীমান্তবিহীন তদন্ত কি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কাজকর্মে অনাকাঙ্ক্ষিত সামিলতা আনবে?

Advertisements

ATS-এর এই তথ্যচাওয়ার নির্দেশিকা সন্ত্রাসবিরোধী আইন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বিতর্ক তৈরি করতে পারে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোর শঙ্কা: মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে এই ধরণের নজরদারি বাংলাদেশী বা আন্তর্জাতিক মডেলের মতো বড় নিরাপত্তা আশঙ্কা তৈরি করতে পারে বিশেষত যদি এটি নিয়মিত বা প্রণিধানহীনভাবে প্রয়োগ করা হয়। যদি মাদ্রাসা কমিউনিটি অংশগ্রহণমূলকভাবে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা না হয়, তাহলে এটি সামাজিক দূরত্ব বাড়াতে এবং আস্থার গঠন বিঘ্নিত করতে পারে।

অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাধারণ নাগরিক একরূপভাবে এর সমর্থন করছেন, কারণ তারা এটিকে শক্তিশালী নজরদারির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ মনে করছে বিশেষত সন্ত্রাসবাদ-ফাইনান্সিং বা র‌্যাডিকালাইজেশন রুখতে।

কিন্তু মতবিরোধও আছে কিছু পক্ষ বলছে, যুক্তিযুক্ত তথ্যনির্ভর তদন্ত হওয়া জরুরি হলেও এটি একপ্রকার ধর্ম-ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রায় পরিণত হতে পারে। সামাজিক ও কমিউনিটি নেতারা বলছেন নিরাপত্তার প্রশ্নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অংশীদারি এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যাতে সন্দেহ ও বিভাজন কমানো যায়।

দিল্লি বিস্ফোরণ তদন্তকে কেন্দ্র করে UP ATS-এর মাদ্রাসাগুলোর তথ্য চাওয়ার নির্দেশিকা একটি গঠনমূলক নিরাপত্তা আলোচনা শুরু করেছে। এটি শুধুমাত্র এক সন্ত্রাসমূলক ঘটনা মোকাবিলা করার স্থানান্তর নয় বরং দেশে ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে ভরসা গড়ে তোলার একটি চ্যালেঞ্জ।

যদি এই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে এবং সংবেদনশীলভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে এটি শুধু সন্ত্রাসপ্রতিরোধক কার্যকর উপায় হতে পারে না, বরং মুসলিম কমিউনিটিকে আইনগত অন্তর্ভুক্তি ও দায়বদ্ধতার অংশীদারও তৈরি করতে পারে। তবে এটি ব্যর্থ হলে, এটি বিভাজন এবং অবিশ্বাস বাড়ানোর পথও তৈরি করতে পারে যা দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সমন্বয়ের জন্য বিপজ্জনক।