‘দুর্নীতিবাজের ছেলে’ বলে তেজস্বীকে কটাক্ষ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

বিহারে চলতি ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ নিয়ে (Tejashwi) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং (লালন সিং) বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা  তেজস্বী…

Tejashwi

বিহারে চলতি ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ নিয়ে (Tejashwi) কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং (লালন সিং) বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা  তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।

লালন সিং তেজস্বীকে ‘বিহারে দুর্নীতির জনক’ লালুপ্রসাদ যাদবের ছেলে বলে কটাক্ষ করে বলেছেন, “রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী এই যাত্রার মাধ্যমে অবৈধভাবে অ-নাগরিকদের নাম ভোটার তালিকায় যুক্ত করার চেষ্টা করছেন।”

   

তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন বিহারিদের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে, তামিলনাড়ুর উপ-মুখ্যমন্ত্রী উধয়নিধি স্টালিনের বক্তব্যের উল্লেখ করে লালন সিং বলেন, “উধয়নিধি বলেছেন, বিহারিরা তামিলনাড়ুতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসে এবং টয়লেট পরিষ্কার করে।

এটা কি বিহারিদের সম্পর্কে আপনাদের ধারণা?” তিনি তেজস্বীর উপরও প্রশ্ন তুলে বলেন, তিনি একসময় উধয়নিধির বক্তব্যের বিরোধিতা করলেও এখন তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন, এর জন্য তাঁর কী ব্যাখ্যা। এই মন্তব্য বিহারের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে বিহারে শুরু হওয়া ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’র লক্ষ্য হলো ভোটার তালিকায় আরও বেশি সংখ্যক মানুষের নাম অন্তর্ভুক্ত করা এবং নাগরিকদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। এই অভিযানে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং দরিদ্র সম্প্রদায়ের মানুষদের ভোটার তালিকায় নাম তুলতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

তবে, লালন সিং অভিযোগ করেছেন, এই অভিযানের আড়ালে অবৈধভাবে অ-নাগরিকদের ভোটার তালিকায় নাম যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, “এই যাত্রা বিহারের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে কলুষিত করার একটি ষড়যন্ত্র।” তবে, আরজেডি এবং কংগ্রেস এই অভিযোগকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে।

লালন সিং তাঁর বক্তব্যে উধয়নিধি স্টালিনের পুরনো মন্তব্যের উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, বিহারিরা তামিলনাড়ুতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে আসে এবং নিম্নমানের কাজ, যেমন টয়লেট পরিষ্কারের মতো কাজে নিয়োজিত থাকে। এই মন্তব্য বিহারে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। তেজস্বী যাদব তখন এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছিলেন, “এই ধরনের মন্তব্য বিহারিদের অপমান করে।

শ্রমিকরা যে কাজই করুক, তাদের সম্মান করা উচিত।” তবে, বর্তমানে তেজস্বী এবং দ্রাবিড় মুনেত্র কাঝাগামের (ডিএমকে) মধ্যে রাজনৈতিক জোটের কারণে লালন সিং প্রশ্ন তুলেছেন, তেজস্বী কীভাবে এই বক্তব্যের পরও উধয়নিধির সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, রেভান্থ রেড্ডি এবং এমকে স্টালিনের হায়দ্রাবাদ এবং চেন্নাইয়ে বিহারিদের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।

Advertisements

এই বক্তব্যের পর তেজস্বী যাদব পালটা আক্রমণ করে বলেছেন, “লালন সিং নিজে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার আগে নিজের দলের দিকে তাকান। বিজেপি এবং জেডি(ইউ) বিহারের জনগণের উন্নয়নের জন্য কিছুই করেনি। আমাদের যাত্রা ভোটারদের অধিকার রক্ষার জন্য, কিন্তু তারা এটিকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছে।”

তিনি উধয়নিধির মন্তব্য নিয়ে বলেন, “আমি তখনই এর বিরোধিতা করেছিলাম। আমাদের জোট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, কিন্তু বিহারিদের সম্মান আমার কাছে সর্বাগ্রে।”কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও এই অভিযোগের জবাবে বলেছেন, “ভোটার অধিকার যাত্রা গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য। বিজেপি এবং তাদের মিত্ররা এই অভিযানকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।”

তিনি বিহারিদের প্রতি অপমানের অভিযোগে বলেন, “আমরা সকলের সম্মানে বিশ্বাসী। কোনো সম্প্রদায় বা রাজ্যের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।” বিহারে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিতর্ক রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়েছে। জেডি(ইউ) এবং বিজেপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে আরজেডি এবং কংগ্রেস জোট তাদের প্রচার জোরদার করেছে।

লালন সিংয়ের এই মন্তব্যকে আরজেডি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে দেখছে, যা বিহারের জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা। বিহারে বিহারিদের প্রতি অপমানের ইস্যু সবসময়ই সংবেদনশীল, এবং এই বিতর্ক তা আরও তীব্র করেছে।

লালন সিংয়ের ‘দুর্নীতিবাজের ছেলে’ মন্তব্য এবং ভোটার অধিকার যাত্রা নিয়ে অভিযোগ বিহারের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তেজস্বী এবং রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে চলা এই যাত্রা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য হলেও, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অভিযোগ এটিকে বিতর্কিত করে তুলেছে।

BJP বিধায়কের বিদ্যুতের বকেয়া বিল সাড়ে ৩ লাখ! লাইন কাটা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা

উধয়নিধি স্টালিনের পুরনো মন্তব্য এবং বিহারিদের প্রতি অপমানের প্রসঙ্গ তুলে এই বিতর্ক আরও জটিল হয়েছে। আগামী দিনে এই ইস্যু কীভাবে বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়।