বাবরির বদলা? ৬ ডিসেম্বর ‘বড়সড় হামলার’ ছক কষেছিল লালকেল্লা বিস্ফোরণের মাস্টারমাইন্ড

Umar Nabi Planning Multiple Attacks Around December 6

লালকেল্লা বিস্ফোরণ তদন্তে ক্রমশ সামনে আসছে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, মূল অভিযুক্ত কাশ্মীরের চিকিৎসক ড. উমর উন নবির উদ্দেশ্য ছিল ৬ ডিসেম্বর — অর্থাৎ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বার্ষিকীতে — এক ‘বড়সড় ও প্রতীকমূলক হামলা’ চালানো। কিন্তু তার আগেই ভেস্তে যায় পরিকল্পনা। কারণ, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ (JeM)-এর সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক-চক্রের সদস্যরা একে একে ধরা পড়ে যায় নিরাপত্তা সংস্থার হাতে।

Advertisements

সূত্রের দাবি, এই জঙ্গি মডিউলটি ছিল একেবারে তথাকথিত ‘হোয়াইট-কলার টেরর নেটওয়ার্ক’, যার অধিকাংশ সদস্যই পেশায় চিকিৎসক। তাদের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছিল জইশের নতুন শহুরে ঘাঁটি, যার মূল লক্ষ্য ছিল একাধিক শহরে সমন্বিত ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো।

   

পাকিস্তানি যোগ এবং ‘ডিসেম্বর ষড়যন্ত্র’

তদন্তে উঠে এসেছে, পাকিস্তানভিত্তিক এক জইশ কমান্ডার আমার আলভি-র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এই চক্রের। তার নির্দেশেই দিল্লি-সহ পাঁচটি শহরে একযোগে বিস্ফোরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল তারা।
কিন্তু জম্মু ও কাশ্মীরে এক সন্দেহভাজন ডাক্তার, ড. মুজাম্মিল আহমেদ গনাই গ্রেফতারের পরই ভেঙে পড়ে গোটা পরিকল্পনা। তার জেরা থেকেই মিলেছে এমন বহু তথ্য, যা লালকেল্লা বিস্ফোরণের সূত্র হিসেবে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।

ডিএনএ টেস্টে মিলল নিশ্চিত প্রমাণ

লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরিত হওয়া হুন্ডাই আই২০ গাড়ির চালক যে ড. উমর উন নবি ছিলেন, তা ইতিমধ্যেই ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়েছে।
কাশ্মীরের পুলওয়ামায় তাঁর পরিবারের সদস্যদের নমুনার সঙ্গে বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার মানবদেহাংশের মিল পাওয়া গিয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, উমর ছিলেন মডিউলের সবচেয়ে ‘র‌্যাডিকালাইজড’ সদস্য—যিনি সবার মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করতেন এবং শেষমেশ নিজেই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান।

ফরিদাবাদ থেকে মেওয়াট—এক জঙ্গির যাত্রাপথ

উমরের গাড়ি লাল ফোর্ড ইকোস্পোর্ট (DL 10 CK 0458) বর্তমানে তদন্তের আওতায়। ফরিদাবাদের এক গ্রামে সেটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সন্দেহ, সেই গাড়ি ব্যবহার করেই বিস্ফোরক দ্রব্য অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুত করা হয়েছিল।
এনএসজি ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি গাড়িটি পরীক্ষা করছে, কারণ আশঙ্কা—এর ভেতরে এখনও বিস্ফোরক থাকতে পারে।

অন্যদিকে, সূত্র বলছে, লালকেল্লা বিস্ফোরণের আগের রাতে উমর মেওয়াট হয়ে দিল্লি-মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ফিরছিলেন রাজধানীতে। পথেই একটি ধাবায় গাড়ির মধ্যে রাত কাটান তিনি। পরদিন সকালে ফের দিল্লিতে প্রবেশ করেন বদরপুর সীমান্ত দিয়ে।

Advertisements

তুরস্ক-যোগে ‘হ্যান্ডলার’ উকাসা

তদন্তে চাঞ্চল্যকরভাবে উঠে এসেছে, উমর নবি ছিলেন তুরস্কভিত্তিক এক হ্যান্ডলার—‘উকাসা’ কোডনেমে পরিচিত—ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে। তারা Session নামের এনক্রিপটেড অ্যাপে কথোপকথন চালাতেন।
সেই হ্যান্ডলারের অবস্থান আঙ্কারা (তুরস্ক)-তে নিশ্চিত করেছে ভারতীয় গোয়েন্দারা। আরও সন্দেহ, ২০২২ সালের মার্চে যাঁরা আঙ্কারায় গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজনই পরে এই চক্রে জড়িয়ে পড়েন।

উমরের ডায়েরি ও ২৫ জনের নাম

উমর ও মুজাম্মিলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতে ‘অপারেশন’ শব্দটি বহুবার লেখা রয়েছে। তারিখ অনুযায়ী, ৮ থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছিল।
ডায়েরিতে প্রায় ২৫ জনের নাম পাওয়া গিয়েছে,যাঁরা মূলত জম্মু-কাশ্মীর ও ফরিদাবাদ এলাকার। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এরা সবাই কোনও না কোনওভাবে বিস্ফোরণচক্রের সঙ্গে যুক্ত।

২৬ লক্ষ টাকা, ২৬ কুইন্টাল সার, এক মারাত্মক চক্রান্ত

গোটা চক্রের আর্থিক লেনদেন নিয়েও শুরু হয়েছে আলাদা তদন্ত। সূত্রের দাবি, চার অভিযুক্ত চিকিৎসক—ড. মুজাম্মিল গনাই, ড. আদিল আহমেদ রাথার, ড. শাহিন সায়িদ ও ড. উমর নবি—মিলে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা নগদে তুলেছিলেন। সেই অর্থ দিয়ে কেনা হয় ২৬ কুইন্টাল এনপিকে সার, যা মূলত বিস্ফোরক তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গুরগাঁও, নুহ ও আশপাশের এলাকা থেকে এই সার কেনা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। এখন সেই লেনদেনের কাগজপত্র ও পরিবহণ রেকর্ড যাচাই করছে তদন্তকারীরা।

বিস্ফোরণের আগে অর্থ নিয়ে দ্বন্দ্ব

সূত্র আরও জানাচ্ছে, বিস্ফোরণের কয়েক দিন আগেই উমর ও মুজাম্মিলের মধ্যে অর্থ ব্যবহারের নিয়ে মতভেদ দেখা দেয়। তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন, এই আর্থিক দ্বন্দ্বই কি তাদের পরিকল্পনার সময় বা পদ্ধতি বদলে দেয়নি?

শেষ কথায় ‘সাদা পোশাকের’ জঙ্গি চক্রের পর্দাফাঁস

ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নাড়িয়ে দিয়েছে এই ঘটনাপ্রবাহ। একদিকে পেশায় চিকিৎসক, অন্যদিকে জঙ্গি মডিউলের মূল কাণ্ডারী, এই দ্বৈত পরিচয়ই এখন তদন্তের কেন্দ্রবিন্দু। তদন্তকারীরা বলছেন, এটি শুধু দিল্লির বিস্ফোরণ নয়, বরং জইশের নতুন কৌশল—যেখানে আধুনিক শিক্ষিত মুখোশের আড়ালে তৈরি হচ্ছিল মারাত্মক নেটওয়ার্ক।