নয়াদিল্লি: নাগরিক আন্দোলন থেকে শুরু করে বিতর্কিত ইউএপিএ মামলা আগামী সোমবার ফের জাতীয় রাজনীতির নজর কেন্দ্রীভূত হতে চলেছে সুপ্রিম কোর্টে। ফেব্রুয়ারি ২০২০-র দিল্লি দাঙ্গা-ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার চার জন বিশিষ্ট নাগরিক কর্মী উমর খালিদ, শারজিল ইমাম, গুলফিশা ফাতিমা এবং মীরান হায়দার এর জামিনের আবেদন শুনানি করবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
বিচারপতি আরবিন্দ কুমার এবং এন. ভি. অঞ্জারিয়া-র বেঞ্চ এই মামলাটি শুনবেন। আদালত ইতিমধ্যেই ২২ সেপ্টেম্বর দিল্লি পুলিশের কাছে নোটিস জারি করে তাঁদের জবাব তলব করেছিল। এখন সোমবারের শুনানিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বাড়ছে মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী মহল ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে।
রাজস্থানে উট পরিবহন নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হলো
এই চার জন সহ মোট নয় জন অভিযুক্তই গত ২ সেপ্টেম্বর দিল্লি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে ভর্ৎসনার শিকার হন। হাইকোর্ট পর্যবেক্ষণ করেছিল, নাগরিক বিক্ষোভের আড়ালে যদি “ষড়যন্ত্রমূলক হিংসা” চালানো হয়, তবে তা কখনও সাংবিধানিক অধিকারের আওতায় পড়তে পারে না। আদালত বলেছিল, “সংবিধান নাগরিকদের প্রতিবাদ করার অধিকার দেয়, কিন্তু সেই অধিকার সীমাহীন নয় আইনের সীমানা লঙ্ঘন করলে সেটি অপরাধ।”
দিল্লি হাইকোর্ট আরও জানিয়েছিল, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ, মতপ্রকাশ ও গণবক্তৃতা করা ভারতের সংবিধানের ১৯(১)(ক) ধারার অধীনে মৌলিক অধিকার। তবে সেটি সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়, বরং যুক্তিসঙ্গত সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়ে। আদালতের ভাষায়, “যদি প্রতিবাদের নামে অরাজকতা ছড়ানোর অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তবে তা দেশের সাংবিধানিক কাঠামোকে বিপন্ন করবে এবং আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করবে।”
এই পর্যবেক্ষণের পরই উমর খালিদ, শারজিল ইমাম, গুলফিশা ফাতিমা ও মীরান হায়দার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। তাঁদের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু রাষ্ট্র তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ইউএপিএ প্রয়োগ করেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে। আইনজীবী মহলের একাংশ বলছেন, এই মামলাটি শুধুমাত্র জামিন শুনানিই নয় এটি নাগরিক স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের ক্ষমতার সীমারেখা নির্ধারণের একটি বড় পরীক্ষা হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (CAA) প্রতিবাদ ঘিরে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি হিসেবে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়, বহু মানুষ আহত হন। সরকার দাবি করে, এই দাঙ্গার পেছনে ছিল পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র; অন্যদিকে, অভিযুক্তরা বলেন, এটি ছিল রাষ্ট্রের দমনমূলক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এক আন্দোলন।
হাইকোর্টের রায়ের পর শুধু খালিদ বা ইমামই নন, আরও কয়েকজন শিফা উর রহমান, আতহার খান, আব্দুল খালিদ সাইফি, মোহাম্মদ সলিম খান ও শাদাব আহমেদ সকলের জামিনও প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অন্য এক বেঞ্চ একই দিনে তসলিম আহমেদের জামিনও নামঞ্জুর করে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইউএপিএ আইনকে রাজনৈতিক আন্দোলন দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের মৌলিক আত্মাকে আঘাত করছে। অন্যদিকে, সরকারের অবস্থান “এটি সন্ত্রাস ও হিংসা রুখতে প্রয়োজনীয় আইন, যার অপব্যবহারের প্রশ্ন ওঠে না।”


