সাময়িক বাড়ি ফিরবেন দিল্লি দাঙ্গায় অভিযুক্ত উমর খালিদ

দিল্লি দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত বড় ষড়যন্ত্র মামলায় (Delhi Riots Conspiracy) অভিযুক্ত উমর খালিদকে দিল্লির একটি আদালত অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর ২০২৪) আদালত…

Umar Khalid Granted Interim Bail

দিল্লি দাঙ্গার সঙ্গে জড়িত বড় ষড়যন্ত্র মামলায় (Delhi Riots Conspiracy) অভিযুক্ত উমর খালিদকে দিল্লির একটি আদালত অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেছে। বুধবার (১৮ ডিসেম্বর ২০২৪) আদালত তার জন্য সাত দিনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন, যার উদ্দেশ্য হলো তাকে পরিবারিক বিবাহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া। উমর খালিদকে জামিন দেওয়া হলেও, আদালত স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তাকে ২০২৫ সালের ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট জেল সুপারিনটেনডেন্টের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

এই অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদনটির শুনানি দিল্লি আদালতের বিশেষ বিচারক অরুণ ভাটিয়া পরিচালনা করেন। উমর খালিদের পক্ষে তার আইনজীবী আদালতে প্রমাণ দেখান যে, তার পরিবারে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবাহ অনুষ্ঠান রয়েছে, এবং সে কারণেই তাকে জামিনের অনুমতি দেওয়া উচিত। উমর খালিদের বিরুদ্ধে দিল্লি দাঙ্গায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরে আদালতে পলাতক ছিলেন।

   

উমর খালিদকে অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করার সময় বিচারক বলেছেন যে, “যেহেতু এটি একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং এটি বহুদিনের পরিকল্পনা ছিল, তাই মানবিক কারণে উমর খালিদকে জামিন দেওয়া হচ্ছে। তবে তাকে আদালতের নির্দেশ অনুসারে নির্ধারিত সময়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে।”

এছাড়া, আদালত উমর খালিদের জামিন শর্ত হিসেবে তাকে হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে বলেও নির্দেশ দেন। জামিন পাওয়ার পর উমর খালিদ তার পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “আমি খুশি যে আদালত আমার আবেদন মঞ্জুর করেছে। আমি আশা করি যে, আমি আমার পরিবারের সঙ্গে এই আনন্দের মুহূর্ত কাটাতে পারব।”

দিল্লি দাঙ্গা মামলার পটভূমি
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে ভয়াবহ দাঙ্গা ঘটে, যা হাজার হাজার মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। এই দাঙ্গার শুরু হয়েছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (NRC) নিয়ে বিতর্কের কারণে। উমর খালিদ সহ অন্যান্য বিরোধী নেতারা এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, এবং তাদেরকে দাঙ্গা উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। তবে খালিদ এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন যে, তিনি কখনও আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে চাননি।

এদিকে, উমর খালিদকে গ্রেফতার করার পর তাঁর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আনা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশের দাবি ছিল যে, উমর খালিদ দাঙ্গার পরিকল্পনা করেছেন এবং একাধিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন যারা দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল।

উমর খালিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
উমর খালিদ, যিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (SFI)-এর সক্রিয় সদস্য ছিলেন, তাকে দিল্লি দাঙ্গার ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, তিনি দাঙ্গা বাঁধাতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন এবং সরকার বিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন। তার গ্রেফতারের পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উমর খালিদের মুক্তির দাবি ওঠে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
উমর খালিদকে গ্রেফতারের পর আন্তর্জাতিক মহলেও তার ব্যাপারে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলির সমালোচনা করেছে এবং তার গ্রেফতারিকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। উমর খালিদের পক্ষে অনেক জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বও সোচ্চার হয়েছেন।

তবে, দিল্লি পুলিশ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উমর খালিদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগগুলি কঠোরভাবে তুলে ধরেছে। তাদের মতে, উমর খালিদ ও তার সহযোগীরা দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছিল।

পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যত পরিস্থিতি
আন্তর্বর্তী জামিন পাওয়ার পর উমর খালিদ এবং তার পরিবার কিছুটা শান্তির মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ পাবেন। তবে, এই জামিনের শর্ত হলো তাকে ৩ জানুয়ারি ২০২৫ এর মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে, এবং তার পরবর্তী শুনানিতে তাকে উপস্থিত থাকতে হবে। আগামী দিনগুলোতে উমর খালিদ ও তার আইনজীবী আদালতে আরও যুক্তি প্রদান করতে পারবেন, যার ফলস্বরূপ তার মামলার বিচারক্রমে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে।

দিল্লি দাঙ্গা এবং তার বড় ষড়যন্ত্রের মামলার সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক এবং আইনি পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। উমর খালিদের জামিনের ঘটনা আগামী মাসগুলিতে আরও বিতর্কের জন্ম দিতে পারে এবং এটি দেশজুড়ে আরও আন্দোলন এবং আলোচনার সূত্রপাত করতে পারে।