ইউক্রেন যুদ্ধ (Ukraine war) নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি কথাও উচ্চারণ করেনি ভারত। এমনকি রাষ্ট্রপুঞ্জে (United nations) রুশ-বিরোধী প্রস্তাবেও ভোটদান থেকে বিরত ছিল নয়াদিল্লি (New Delhi)। বার বার অনুরোধ করা সত্বেও গত বছর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানায়নি ভারত। অন্যদিকে, রাশিয়া নিয়ে ক্রমাগত দিল্লির ‘নীরবতা’ ভালো চোখে দেখেনি আমেরিকা। নয়াদিল্লির এই পুতিন-নির্ভরতা (Vladimir Putin) নিয়ে এর আগেও বাঁকা মন্তব্য করেছিল পশ্চিমী দেশগুলি। কিন্তু তাতে খুব একটা আমল দেয়নি মোদী-জয়শঙ্করেরা।
তারপর ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও আভ্যন্তরীন পরিস্থিতি নিয়েও একাধিক রিপোর্টও ‘খুশি’ করেনি ওয়াশিংটনকে। যারফলে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে এক ধরনের ‘শীতলতা’ নেমে এসেছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
যার প্রতিফলন দেখা গেল সম্প্রতি কোয়াড সম্মেলনে। চিনকে প্রতিরোধ করতেই ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে এই গোষ্ঠী বানিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু সিডনিতে এই কোয়াডের সম্মেলনে হাজির হয়নি আমেরিকা। আর তাতেই সন্দেহ বাড়ছে যে কোয়াড গোষ্ঠীকে হয়তো অপ্রাসঙ্গিক মনে করছে আমেরিকা। কারণ এই গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য ছিল ভারত।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় (Asia-Pecific region) অঞ্চলে চিনকে প্রতিহত করতে নয়াদিল্লিকেই প্রথম থেকে এই গোষ্ঠীর অন্যতম ‘ঘোড়া’ ভাবত আমেরিকা। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে নয়াদিল্লির ইউক্রেন নিয়ে ‘অনড়’ মনোভাবের কারণে মোদী সরকারকে ‘পছন্দে’র তালিকায় রাখতে চাইছে না হোয়াইট হাউস। বরং তার পরিবর্তে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রিটেনের আউকাস গোষ্ঠীর গুরুত্ব বাড়াতে বেশি আগ্রহী জো বাইডেন প্রশাসন।
এবছর লোকসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ায়ীতে ভারতে কোয়াড সম্মেলন করতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। জি-২০’ র ধাঁচেই তিনি দেশবাসীকে নিজের ‘বিশ্বগুরু’ ভাবমূর্তিকে তুলে ধরে ভোটে ফায়দা তোলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নয়াদিল্লির সেই আবেদন কার্যত ‘পাত্তা’ই দেয়নি ওয়াশিংটন। ফলে আন্তর্জাতিকস্তরে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
এদিকে ভারত সীমান্তে চিনের অনুপ্রবেশ ও দাদাগিরি নিয়েও ভারতের পাশে দাঁড়াতে খুব একটা উত্সাহী দেখাচ্ছে না আমেরিকাকে। তাঁদের এই ‘ঔদাসীন্যতা’ নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় নয়াদিল্লি। তবে মন বললেও মুখ খুলতে নারাজ সাউথ ব্লক। মার্কিন নির্বাচন নভেম্বরেই, তার আগে মার্কিন বিদেশ নীতিতে শিথীলতা এসেছে বলেই পাল্টা যুক্তি তাঁদের। তবে ‘শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকা’র এই লক্ষণ মোটেও সুবিধার ঠেকছে বলে দাবি কূটনৈতিক মহলের।