মুম্বইয়ের ওয়ার্লি ডোমে শিবসেনা (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরে) (Uddhav) এবং মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)-এর যৌথ ‘বিজয় সমাবেশ’ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই সমাবেশে শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ধব ঠাকরে এবং এমএনএস প্রধান রাজ ঠাকরে ২০ বছর পর এক মঞ্চে মিলিত হয়েছেন।
এই সমাবেশ সম্ভব হয়েছে মারাঠি ভাষা ও পরিচয় রক্ষার জন্য মহারাষ্ট্র সরকারের তিন ভাষা নীতি প্রত্যাহারের উদযাপন করতে। (Uddhav) তবে, শিবসেনা সাংসদ নরেশ মাস্কে এই সমাবেশ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দাবি করেছেন, “রাজ্য সরকার হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এই যৌথ সমাবেশে কেবল রাজ ঠাকরের বক্তৃতায় মারাঠি ভাষার উল্লেখ ছিল, কিন্তু উদ্ধব (Uddhav) ঠাকরের বক্তৃতায় মারাঠির কোনো উল্লেখ ছিল না। তাঁর বক্তৃতায় নির্বাচনে পরাজয়ের দুঃখ প্রকাশ পেয়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে এই মিলন শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য, তাদের দাবি করা মারাঠি কারণের জন্য নয়। মহারাষ্ট্রে কেউ মারাঠির বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না।”
এই ‘আওয়াজ মারাঠিচা’ (Uddhav) সমাবেশটি মহারাষ্ট্র সরকারের এপ্রিলে জারি করা দুটি সরকারি রেজোলিউশন (জিআর) প্রত্যাহারের উদযাপন হিসেবে আয়োজিত হয়েছিল, যেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দিকে তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব ছিল। তীব্র বিরোধিতার পর, মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস ২৯ জুন এই জিআর প্রত্যাহার করেন।
সমাবেশে উদ্ধব ও রাজ ঠাকরে (Uddhav) একসঙ্গে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের মূর্তিতে মাল্যদান করেন এবং মারাঠি পরিচয়ের প্রতি তাঁদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। রাজ ঠাকরে বলেন, “আমি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, আমার মহারাষ্ট্র যেকোনো রাজনীতির চেয়ে বড়। আজ, ২০ বছর পর, আমি এবং উদ্ধব একসঙ্গে এসেছি। বালাসাহেব যা পারেননি, দেবেন্দ্র ফড়নবিস তা করে দেখিয়েছেন।”
নরেশ মাস্কের অভিযোগশিবসেনা (একনাথ শিন্ডে গোষ্ঠী) সাংসদ নরেশ মাস্কে এই সমাবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন যে, উদ্ধব ঠাকরের বক্তৃতায় মারাঠি ভাষা বা পরিচয়ের উল্লেখ না থাকায় তাঁদের মারাঠি মানুষের জন্য ঐক্যের দাবি প্রশ্নবিদ্ধ। মাস্কে বলেন, “এই সমাবেশে রাজ ঠাকরে মারাঠি ভাষার জন্য কথা বলেছেন, কিন্তু উদ্ধবের বক্তৃতায় সেই আবেগের অভাব ছিল।
তাঁর কথায় নির্বাচনে হারের হতাশা প্রকাশ পেয়েছে। এটি স্পষ্ট যে তাঁদের এই মিলন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক কৌশল, মারাঠি ভাষার জন্য নয়।” মাস্কে আরও বলেন, “মহারাষ্ট্রে মারাঠি ভাষার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। সরকার কখনো হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।” রাজনৈতিক তাৎপর্য২০০৫ সালে রাজ ঠাকরে (Uddhav) শিবসেনা ত্যাগ করে এমএনএস গঠন করার পর থেকে দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছিল।
এই সমাবেশ তাঁদের প্রথম যৌথ প্রকাশ্য উপস্থিতি, যা আসন্ন বৃহন্মুম্বাই পৌরসভা (বিএমসি) নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ। শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ সঞ্জয় রাউত এই মিলনকে “মহারাষ্ট্রের জন্য উৎসব” হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এটি রাজনৈতিক নয়, মারাঠি মানুষের জয়।” (Uddhav) তবে, মাস্কের মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে এই ঐক্য রাজনৈতিক সুবিধার জন্য হতে পারে, বিশেষ করে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন মহাযুতি সরকারের বিরুদ্ধে।
উদ্ধব ও রাজের বক্তব্যরাজ ঠাকরে (Uddhav) তাঁর বক্তৃতায় মারাঠি ভাষার প্রাধান্যের উপর জোর দিয়ে বলেন, “মারাঠা সাম্রাজ্য অনেক রাজ্য শাসন করলেও কখনো মারাঠি চাপিয়ে দেয়নি। হিন্দির বিরুদ্ধে আমার কোনো বিরোধ নেই, কিন্তু মারাঠির অস্তিত্ব রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য।” উদ্ধব ঠাকরে বলেন, “আমরা একসঙ্গে এসেছি এবং একসঙ্গে থাকব।”
তিনি বিজেপির সমালোচনা করে বলেন, “যারা মারাঠি মানুষের অধিকারের জন্য লড়াইকে গুন্ডামি বলে, আমরা তাদের গুন্ডা।” তবে, মাস্কের অভিযোগ অনুযায়ী, উদ্ধবের বক্তৃতায় মারাঠি ভাষার উল্লেখের অভাব এই সমাবেশের উদ্দেশ্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটএই সমাবেশ (Uddhav) মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। ২০২৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শিবসেনা (ইউবিটি) ২০টি আসন জিতলেও এমএনএস কোনো আসন পায়নি। তবে, রাজ ঠাকরের মারাঠি পরিচয়ের প্রতি আবেদন এখনও শহুরে ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলে। বিএমসি নির্বাচনের আগে এই ঐক্য মারাঠি ভোট একত্রিত করতে পারে।
গম উৎপাদনে অবাক করা অবস্থান ভারতের
উদ্ধব ও রাজ ঠাকরের (Uddhav)যৌথ সমাবেশ মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। তবে, নরেশ মাস্কের অভিযোগ এই ঐক্যের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। মারাঠি ভাষা ও পরিচয়ের জন্য এই মিলন স্থায়ী হবে নাকি নির্বাচনী কৌশল, তা ভবিষ্যতই বলবে।