কর্ণাটক: উদুপিতে গ্রেফতার হল দুই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ সংক্রান্ত গোপন তথ্য (Pakistan espionage case) পাকিস্তানে পাচার করা। কর্ণাটকের উদুপি পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েছে রোহিত (২৯) ও সান্ত্রি (৩৭) নামে দুই ব্যক্তি। দু’জনেই উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর জেলার বাসিন্দা এবং দীর্ঘদিন ধরে জাহাজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, কেন্দ্রের বন্দর, নৌপরিবহণ ও জলপথ মন্ত্রকের অধীনস্থ কোচিন শিপইয়ার্ডের মালপে-উদুপি ইউনিটের একটি সাব-কন্ট্রাক্ট ছিল মেসার্স সুষমা মেরিন প্রাইভেট লিমিটেডের কাছে। সেখানে ইনসুলেটর হিসেবে কাজ করছিল রোহিত। এর আগে সে কেরালার কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডে কাজ করত, যেখানে তার অ্যাক্সেস ছিল বিভিন্ন সংবেদনশীল নৌ-প্রকল্প সংক্রান্ত তথ্যের প্রতি।
অভিযোগ, কোচিতে কর্মরত অবস্থায় রোহিত ভারতের নৌবাহিনীর জাহাজের সংখ্যা, রক্ষণাবেক্ষণের তথ্য, প্রকল্পের অগ্রগতি এবং বিভিন্ন গোপন নথি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাকিস্তানি এক ব্যক্তির কাছে পাঠাত। বিনিময়ে সে বেশ কিছু আর্থিক সুবিধা পেয়েছে বলেও সন্দেহ পুলিশের। আরও উদ্বেগের বিষয় উডুপি ইউনিটে বদলি হওয়ার পরেও সে যোগাযোগ বজায় রেখেছিল। কোচিতে কর্মরত এক বন্ধুর কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করে আবারও তা এক অননুমোদিত ব্যক্তির কাছে পাঠায়।
এতে শুধু শিপইয়ার্ডের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়নি, বরং দেশের নৌবাহিনীর নিরাপত্তা সরাসরি বিপদের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। শত্রু দেশের হাতে নৌ-তথ্য পৌঁছে যাওয়া ভারতের সামরিক সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত মারাত্মক বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনার পর কোচিন শিপইয়ার্ডের উদুপি ইউনিটের সিইও মালপে থানায় একটি বিস্তারিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের ভিত্তিতেই রোহিত ও সান্ত্রিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল সান্ত্রি হয়তো সরাসরি জড়িত নয়, পরে তদন্তে উঠে আসে সে তথ্য পাচারের বিষয়ে জানত এবং রোহিতকে বিভিন্নভাবে সাহায্যও করেছিল।
তদন্তকারীরা দুই অভিযুক্তের মোবাইল ফোন, চ্যাট লগ, ব্যাংক লেনদেন এবং ডিভাইসের ডিজিটাল মেমরি বিশ্লেষণ করছেন। পাকিস্তানের নম্বর, সন্দেহজনক লেনদেন বা কোনও বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেলে মামলাটি NIA-এর হাতে তুলে দেওয়া হতে পারে।
আদালত দুই অভিযুক্তকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তদন্তকারীরা তাদের যোগাযোগের নেটওয়ার্ক, বিদেশি শক্তির সঙ্গে কোনও যোগসূত্র এবং আরও কেউ এই র্যাকেটের সঙ্গে যুক্ত কিনা তা খুঁজে বের করবেন।
উদুপি পুলিশ জানিয়েছে যে, কোচিন শিপইয়ার্ড বা উপকূলীয় অঞ্চলে সক্রিয় আরও কোনও সন্দেহভাজন গুপ্তচরচক্র কাজ করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা জানিয়েছে।
