তেলেঙ্গানা পুলিশের কাছে দুই শীর্ষ মাওবাদীর আত্মসমর্পণ

হায়দরাবাদ: তেলঙ্গানায় মাওবাদী (Maoist Leaders) আন্দোলনে বড়সড় ধাক্কা। বৃহস্পতিবার রাজ্যের পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)-এর দুই শীর্ষ ভূগর্ভস্থ নেতা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এক জন মহিলা যিনি দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আত্মসমর্পণকারীরা হলেন কাকারালা সুনীথা ওরফে বদ্রি এবং চেন্নুরি হরিশ ওরফে রামন্না।

Advertisements

এই দুই নেতা প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করেন রাচাকোন্ডা পুলিশ কমিশনার জি. সুধীর বাবুর উপস্থিতিতে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, তেলঙ্গানা সরকারের পুনর্বাসন প্রকল্প, উন্নয়নমূলক উদ্যোগ এবং মূলস্রোতে ফিরে আসা মাওবাদীদের জন্য দেওয়া সহায়তা এই দুই নেতাকে আত্মসমর্পণে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাঁরা জানিয়েছেন, এখন থেকে পরিবারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে চান।

সুনীথার বিপ্লবী জীবন

হায়দরাবাদের ভানস্থলিপুরমের বাসিন্দা কাকারালা সুনীথা তাঁর ছাত্রজীবনে বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৮৫ সালে রাজামুন্দ্রিতে ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় তিনি যুক্ত হন র‍্যাডিকাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সঙ্গে। এর পরপরই ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে তিনি যোগ দেন সিপিআই (পিপলস ওয়ার)-এ এবং আত্মগোপনে চলে যান।

২০০১ সালে সুনীথা ও তাঁর স্বামী টিএলএন চালামকে পাঠানো হয় অন্ধ্র–ওডিশা সীমান্ত এলাকায়। ২০০৬ সালে তাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয় দণ্ডকারণ্য অঞ্চলে। সিপিআই (মাওবাদী)-এর কেন্দ্রীয় কমিটি তাঁদের নিযুক্ত করে রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রচারে। সেখানে তিনি আঞ্চলিক রাজনৈতিক স্কুল এবং শিক্ষা বিষয়ক দফতরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মধ্য ও জুনিয়র স্তরের কর্মীদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ এবং দলের মুখপত্র ‘ক্রান্তি’-র মতো প্রকাশনায় নিয়মিত অবদান রাখতেন সুনীথা।

কিন্তু ২০২৫ সালের জুন মাসে অন্নপুরম জাতীয় উদ্যান এলাকায় এক সংঘর্ষে তাঁর স্বামী চালাম নিহত হন। এর পর থেকেই তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বলে পুলিশ জানিয়েছে। অবশেষে বৃহস্পতিবার তিনি মূল স্রোতে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

Advertisements

হরিশের মাওপথ

ভূপালপল্লী জেলার বাসিন্দা চেন্নুরি হরিশ, ওরফে রামন্না, ২০০৬ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই মাওবাদী মতাদর্শে আকৃষ্ট হন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্বে যুক্ত ছিলেন। ২০২৪ সালের মে মাসে তাঁকে পদোন্নতি দিয়ে তেলঙ্গানা রাজ্য কমিটির এরিয়া কমিটি মেম্বার (ACM) করা হয়।

তেলঙ্গানা পুলিশের দাবি, হরিশ একাধিক সংঘর্ষে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। বিশেষত ২০২২ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৫ সালের জুনে সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

রাচাকোন্ডা পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, সুনীথা ও হরিশের আত্মসমর্পণ সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জয়। তেলঙ্গানা পুলিশ অন্যান্য মাওবাদীদেরও আহ্বান জানিয়েছে, তাঁরা যেন জঙ্গলের জীবন ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসেন এবং রাজ্যের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দেন। পুলিশের আশ্বাস, মূলস্রোতে ফেরা প্রতিটি মাওবাদীকে স্বনির্ভর জীবনের জন্য সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।

এই দুই শীর্ষ নেতার আত্মসমর্পণকে নিরাপত্তা মহল তেলঙ্গানার মাওবাদী আন্দোলনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখছে।