ভূমিধ্বস এ আর ও দুই দেহ উদ্ধার উত্তর সিকিমে

উত্তর সিকিমের (north-sikkim) মানগান জেলার চাটেনে ১ জুন সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিধ্বস এর ঘটনায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) এই ভূমিধসের স্থান থেকে…

two bodies recovered from north-sikkim

উত্তর সিকিমের (north-sikkim) মানগান জেলার চাটেনে ১ জুন সংঘটিত ভয়াবহ ভূমিধ্বস এর ঘটনায় উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (১০ জুন, ২০২৫) এই ভূমিধসের স্থান থেকে আরও দুটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মানগানের পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট (এসপি) সোনম দেচু ভূটিয়া জানিয়েছেন, “১ জুনের ভূমিধসের স্থান থেকে একজন পুরুষ ও একজন মহিলার দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”

এই দুটি দেহের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। এই ঘটনায় ছয়জন নিখোঁজ ব্যক্তির মধ্যে এখন পর্যন্ত তিনজনের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, ৮ জুন থেকে চাটেনে আটকে পড়া স্থানীয় বাসিন্দা, ট্যাক্সি চালক এবং পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য বিশেষ হেলিকপ্টার অভিযান চালানো হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি এবং ভূমিধ্বস এর কারণে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় এই উদ্ধার অভিযান জরুরি ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে।

   

ভূমিধ্বস এর ঘটনা ও প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি (north-sikkim)

১ জুন সন্ধ্যা ৭টায় উত্তর সিকিমের (north-sikkim) লাচেন জেলার চাটেনে একটি সেনা শিবিরে ভারী বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট একটি ভূমিধস আঘাত হানে। এই ঘটনায় তিনজন সেনা সদস্য—হাবিলদার লখবিন্দর সিং, ল্যান্স নায়েক মুনিশ ঠাকুর এবং পোর্টার অভিষেক লাখাডা—প্রাণ হারান।

এছাড়া, ছয়জন সেনা সদস্য নিখোঁজ হন, যার মধ্যে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের মেয়ে রয়েছেন। চারজন সেনা সদস্য আহত হন এবং তাঁদের উদ্ধার করা হয়েছে। এই ভূমিধসের ফলে চাটেন এবং লাচেনের সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এবং প্রায় ২,০০০ পর্যটক লাচেন, লাচুং এবং চুংথাং শহরে আটকা পড়েন।

হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযান

৮ জুন থেকে সিকিম (north-sikkim) সরকার চাটেনে আটকে পড়া স্থানীয় বাসিন্দা, ট্যাক্সি চালক এবং পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য বিশেষ হেলিকপ্টার অভিযান শুরু করে। এই অভিযান পাকয়ং গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দর থেকে পরিচালিত হচ্ছে। রবিবার (৮ জুন) প্রথম হেলিকপ্টার সকালে চাটেনের উদ্দেশে রওনা দেয়। এই অভিযানে MI-17 এবং চিতা হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে, যা কঠিন ভূখণ্ড এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

৮ জুনের অভিযানে ২৮ জন বেসামরিক নাগরিক, যার মধ্যে তিনজন নাবালক, ট্যাক্সি চালক এবং সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁদের উদ্ধার করা হয়(north-sikkim)। এছাড়া, ২০ জন সেনা সদস্যকে পাকয়ং গ্রিনফিল্ড বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। MI-17 হেলিকপ্টারের মাধ্যমে চাটেনে স্থানান্তরিত সেনা সদস্যদের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পৌঁছে দেওয়া হয়। সিকিম সরকার জানিয়েছে, এই উদ্ধার অভিযান দুর্গত এলাকায় আটকে পড়া ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য পরিচালিত হচ্ছে।

এর আগে, ৬ জুন ৬৩ জন পর্যটককে (north-sikkim) দুটি MI-17 হেলিকপ্টার এবং একটি চিতা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে চাটেন থেকে পাকয়ং বিমানবন্দরে নিয়ে আসা হয়। এই অভিযানে ৩৯ জনকে প্রথম পর্যায়ে এবং ২০ জনকে দ্বিতীয় পর্যায়ে উদ্ধার করা হয়। ৭ জুন, ৭৬ জন সেনা সদস্যকে তিনটি MI-17 হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়, যার মাধ্যমে চাটেন থেকে সেনা সদস্যদের উদ্ধার অভিযান সম্পন্ন হয়।

দেহ উদ্ধার ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ

৯ জুন সোমবার, নিখোঁজ ছয়জনের মধ্যে একজন সেনা সদস্য সাইনুদ্ধিন পি.কে.-এর দেহ উদ্ধার করা হয়। ১০ জুন আরও দুটি দেহ উদ্ধারের মাধ্যমে মোট তিনজনের দেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ সুপারিন্টেনডেন্ট সোনম দেচু ভূটিয়া জানিয়েছেন, বাকি তিনজন নিখোঁজ ব্যক্তির খোঁজে তল্লাশি অব্যাহত রয়েছে। এই তিনজনের মধ্যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল, তাঁর স্ত্রী এবং মেয়ে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এসপি ভূটিয়া (north-sikkim) বলেন, “ভূমিধসের ধ্বংসাবশেষ নদীতে ভেসে গেছে, যার কারণে নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।” তিনি আরও জানান, উদ্ধারকারী দল কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে।

Advertisements

অভিযানে সমন্বয় ও চ্যালেঞ্জ

এই উদ্ধার অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (NDRF), সিকিম রাজ্য(north-sikkim) বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (SDRF), সীমান্ত সড়ক সংস্থা (BRO) এবং মানগান জেলা প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করছে। সিকিমের মুখ্য সচিব আর. তেলাং এই অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে রাজ্যকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তামাং এক্স-এ একটি পোস্টে বলেন, “সিকিমের জনগণের পক্ষ থেকে আমি ভূমিধস ও বন্যা পরিস্থিতিতে আপনার উদ্বেগ এবং সমর্থনের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের রাজ্য প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে পুরোপুরি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

প্রতিকূল আবহাওয়া এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সড়ক যোগাযোগ এই অভিযানের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাচেন এবং চাটেনের মধ্যে তরণ চু নদীর উপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভেসে গেছে, যা সড়কপথে উদ্ধার কাজকে আরও জটিল করে তুলেছে। সেনাবাহিনীর ১১২তম ব্রিগেড লাচেন এবং চাটেনের মধ্যে একটি পায়ে হাঁটা পথ তৈরি করেছে, যা স্থলপথে সীমিত চলাচলের সুযোগ দিচ্ছে।

সুখোইকে ‘সুপার-ডুপার’ না করা পর্যন্ত DRDO বিশ্রাম নেবে না, এই দুটি জিনিস দিয়ে হবে সজ্জিত

সরকারি উদ্যোগ ও পর্যটন নির্দেশিকা

সিকিম সরকার (north-sikkim) ২৮ মে থেকে মানগান জেলায় অবিরাম বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতিকে বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা করেছে। পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল বিভাগ পর্যটকদের জন্য একটি পরামর্শ জারি করে জানিয়েছে, লাচেন-লাচুং সড়ক একাধিক স্থানে ভূমিধসের কারণে অস্থায়ীভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে, সিকিমের অন্যান্য অংশ পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

চাটেনে (north-sikkim) ভূমিধ্বস এর ঘটনা উত্তর সিকিমের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেছে। হেলিকপ্টার উদ্ধার অভিযান এবং সমন্বিত ত্রাণ প্রচেষ্টা আটকে পড়া ব্যক্তিদের নিরাপদে উদ্ধারে সফল হয়েছে। তবে, নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজ এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এখনও একটি বড় কাজ।

সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত প্রচেষ্টা এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় এড়াতে আরও শক্তিশালী দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।