উত্তর কাশ্মীরের সোপোরে যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে (Police operation ) গ্রেফতার হলো দুই সন্দেহভাজন হাইব্রিড জঙ্গি। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাদিক কলোনি, মোমিনাবাদ সোপোর এলাকায় একটি বিশেষ নাকা চেকিং চলাকালীন এই গ্রেফতারি হয়। জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ, ২২ রাষ্ট্রীয় রাইফেলস (RR) এবং সিআরপিএফ–এর ১৭৯ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল এই অভিযানে অংশ নেয়।
পুলিশের অফিশিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, নির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় নাকা চেকিং বসানো হয়। সূত্রের দাবি ছিল, এলাকায় দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তি চলাফেরা করছে এবং তাদের কাছে অস্ত্র থাকতে পারে। তথ্য পাওয়া মাত্রই নিরাপত্তা বাহিনী দ্রুত এলাকায় ঘেরাও দেয়, যাতে কোনো দিক দিয়ে কেউ পালাতে না পারে।
পুলিশ জানিয়েছে, Fruit Mandi Sopore দিক থেকে যখন দুই ব্যক্তি আহাত বাবা ক্রসিংয়ের দিকে আসছিলেন, তখন তারা নাকা চেকিং দেখে আচমকা পালানোর চেষ্টা করেন। নিরাপত্তা বাহিনী সঙ্গে সঙ্গে তৎপরতা দেখিয়ে তাঁদের ধরে ফেলে। পরে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তল্লাশির সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়।
গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তির নাম—
শবির আহমদ নাজার, পিতা মোহাম্মদ আকবর নাজার, বাসিন্দা মোহল্লা তৌহিদ কলোনি মাজবুগ
শবির আহমদ মির, পিতা মোহাম্মদ সুলতান মির, বাসিন্দা ব্রাথ সোপোর
তাদের কাছ থেকে যে অস্ত্র–গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—
- ০১টি পিস্তল
- ০১টি ম্যাগাজিন
- ২০টি লাইভ রাউন্ড
- ০২টি হ্যান্ড গ্রেনেড
পুলিশ জানিয়েছে, এই অস্ত্র উদ্ধার স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে দুই অভিযুক্ত জঙ্গি–সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বা কোনও বড় নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। তবে তারা কোন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং কোন উদ্দেশ্যে এলাকায় ঘুরছিল—তা এখনও তদন্তাধীন।
সোপোর পুলিশ স্টেশনে FIR No. 253/2025 এর ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে UAPA–সহ অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা চলছে। পুলিশ বলেছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে, যাতে জঙ্গি নেটওয়ার্কের সম্ভাব্য সংযোগ, লজিস্টিক সাপোর্ট বা সহযোগীদের পরিচয় জানা যায়।
পুলিশের দাবি অনুযায়ী, দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় হাইব্রিড জঙ্গিদের সক্রিয়তা বাড়ছে বলে গোয়েন্দা inputs ছিল। হাইব্রিড জঙ্গি বলতে সাধারণত এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয় যারা পেশায় বা দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করলেও, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের সহায়তা করে বা অস্ত্র বহনে যুক্ত থাকে। তাদের চিহ্নিত করা তুলনামূলকভাবে কঠিন, কেননা তাদের উপর আগে থেকে কোনো সন্দেহ থাকে না।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া দুই ব্যক্তি সম্প্রতি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে সন্দেহজনক যাতায়াত করছিল। তারা কারও নির্দেশে অস্ত্র নিয়ে এই এলাকায় এসেছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কে তাদের পাঠিয়েছিল, কী উদ্দেশ্যে তারা এখানে ছিল, এবং তাদের টার্গেট কী ছিল—এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
অভিযানের পর পুলিশের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, “এই দুই হাইব্রিড জঙ্গির গ্রেফতার একটি বড় সাফল্য। তারা যদি পালাতে পারত, তাহলে এলাকায় বড়সড় নাশকতা ঘটতে পারত। আমরা আরও তদন্ত করে বের করার চেষ্টা করছি, এদের পেছনে কারা আছে।” তিনি আরও জানান, উপত্যকায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
সোপোর এলাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একাধিকবার নাকা চেকিং ও সার্চ অপারেশন বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, এর ফলে বহুবার বড় নাশকতার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। স্থানীয় মানুষের সুরক্ষার স্বার্থে এই ধরনের যৌথ অপারেশন ভবিষ্যতেও জারি থাকবে।
J&K পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “উপত্যকায় শান্তি বজায় রাখতে এবং জঙ্গি নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনগণের সহযোগিতা পেলে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা সম্ভব।”
সব মিলিয়ে, সোপোরের এই অভিযান উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন গুরুত্ব যোগ করেছে। জঙ্গি নেটওয়ার্কের সম্ভাব্য দিকগুলি খতিয়ে দেখে এই ঘটনার পরবর্তী পর্বের তদন্ত কী দিকে মোড় নেয়, এখন নজর সেই দিকেই।
