ভারত, ২৪ অক্টোবর: ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) নতুন পদক্ষেপে রাশিয়ার বৃহত্তম তেল কোম্পানি রোসনেফট এবং লুকয়েলকে লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য মস্কোকে চাপ দেওয়া। ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভারত, যেমনটি আপনি জানেন, আমাকে জানিয়েছে তারা শীর্ষে থামবে,” যদিও ভারতীয় সরকার এই বক্তব্যের কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি।
নির্দেশিত নিষেধাজ্ঞাগুলো ২১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ দেশটি রাশিয়ার কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঁচামাল তেল আমদানি করে। ভারতের রাজ্য মালিকানাধীন তেল রিফাইনারি এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো বড় কর্পোরেশন ইতিমধ্যেই তাদের রাশিয়ার তেলের চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্যও এর আগে অনুরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে বৈশ্বিক তেল বাজারে এখন নতুন উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ভারতের জন্য এই পরিস্থিতি জটিল, কারণ দেশের শক্তি নিরাপত্তা বজায় রাখতে হবে এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করতে হবে।
ভারতের প্রায় ২০-২৫ শতাংশ ক্রুড অয়েল রাশিয়া থেকে আসে। ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে, দেশটি নতুন সরবরাহকারী খুঁজতে বাধ্য হবে। এ জন্য ভারতীয় সংস্থা এবং সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজতে হবে, যাতে তেলের অভাব না হয় এবং মূল্যস্ফীতি বাড়তে না পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভারতকে দুটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। প্রথম, বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপের মধ্যে তার শক্তি নিরাপত্তা বজায় রাখা। দ্বিতীয়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে তেল সংগ্রহ করা। রাশিয়ার তেল সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে ভারতের ঘরের বাজারে তেলের দাম বাড়তে পারে এবং অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্পের পদক্ষেপ শুধু অর্থনৈতিক নয়, কূটনৈতিক চাপও তৈরি করছে। ভারতকে সাবধানভাবে কৌশল প্রয়োগ করতে হবে যাতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় থাকে, এবং একই সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী শক্তি চুক্তি নষ্ট না হয়।
ভারতের বড় তেল সংস্থা যেমন রিলায়েন্স এবং ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন, ইতিমধ্যেই তাদের রাশিয়ান চুক্তি পুনঃমূল্যায়ন করছে। তারা বিকল্প সরবরাহকারীর খোঁজ করছে এবং বর্তমান চুক্তিগুলোর শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করছে। এই প্রক্রিয়ায়, ভারতের শক্তি মন্ত্রণালয়ও সক্রিয়ভাবে পরামর্শ দিচ্ছে।
বিশ্ব বাজারে রাশিয়ান তেলের সরবরাহ কমে গেলে, আন্তর্জাতিক ক্রুড অয়েলের দামও বাড়তে পারে। ভারতের জন্য এটি একটি বড় উদ্বেগের বিষয়, কারণ দেশটির অর্থনীতি এখনও মহামারির পর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট। তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে পেট্রোল, ডিজেল এবং অন্যান্য শক্তি খাতে খরচ বাড়বে, যা সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, ভারতের কৌশল হতে পারে, বৈচিত্র্যময় সরবরাহ উৎস খোঁজা এবং রাশিয়ার তেলের ওপর আংশিক নির্ভরতা কমানো। এভাবে দেশটি বৈশ্বিক চাপের মধ্যে শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতকে আন্তর্জাতিক চাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাশিয়ার তেল শিল্পকেই লক্ষ্য করছে না, বরং এটি ভারতের মতো বড় তেল-আমদানিকারক দেশগুলোকেও নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে বাধ্য করছে।
অবশেষে, বিশ্বের তেল বাজারে এই নতুন পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপের মধ্যে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এসেছে। শক্তি নিরাপত্তা, অর্থনীতি এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক—এই তিনটি ক্ষেত্রেই দেশের সতর্ক এবং সুষম পদক্ষেপ নেওয়া এখন অপরিহার্য।


