প্রসেনজিৎ চৌধুরী: উত্তর পূর্বাঞ্চলের তিন রাজ্য মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন (Tripura Election 2023) নিয়ে বিজেপি বিশেষ চিন্তিত। কেন্দ্রের শাসক দলের তরফে ত্রিপুরাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, এ রাজ্যেই রাম জোটের সাথে বাম জোটের সরাসরি ভোট লড়াই। রাজনৈতিক নীতিগত কারণে সংঘ পরিবার পরিচালিত বিজেপির মূল শত্রু বামপন্থীরা।
ত্রিপুরা বামপন্থীদের অন্যতম ঘাঁটি। ফলে এ রাজ্যের ভোট যুদ্ধেই বিশেষ নজর মোদী-শাহর। বিপরীত শিবিরে আছেন সর্বহারা মানিক সরকারের মতো সিপিআইএম নেতা। যিনি প্রথম যুদ্ধে রাম শক্তির কাছে পরাজিত হয়ে দ্বিতীয় যুদ্ধে ফের কোমর বেঁধে নেমেছেন, সাথী কংগ্রেস!
ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রাখছেন পশ্চিমবঙ্গবাসী। কারণ, বঙ্গ বিধানসভা এখন বাম শূন্য। আর ত্রিপুরায় প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সিপিআইএম নামছে ভোট যুদ্ধে। দূরবর্তী বাংলাভাষী প্রধান রাজ্যটির সাথে বঙ্গ রাজনীতির সরাসরি যোগাযোগ মূলত একই ভাষা, চালচলন। নইলে দেশের অন্যতম বাম শাসিত রাজ্য কেরল, তবে তাদের নিয়ে চর্চা কমই হয় বঙ্গ জীবনে। এর মূল কারণ, ভাষা ও সামাজিক রীতির ব্যবধান।
ত্রিপুরায় আছে ভোট সন্ত্রাস। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সাথে কোনও অমিল নেই। নির্বাচন কমিশন বলছে ভোট হবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে। এতে ভোটারদের নেই বিশ্বাস।
রাজনৈতিক দিক থেকে ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচন বাম শক্তির কাছে অতি গুরুত্ব রাখে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর ক্ষমতা থেকে বামফ্রন্ট বিদায় নিলেও ত্রিপুরায় চলেছিল বাম শাসন। এ রাজ্যে ২০১৮ সালে বামফ্রন্ট সরকারের টানা ২৫ বছরের জমানা শেষ হয়। কলকাতা ও আগরতলার সিংহাসন থেকে সরে গেলেও বঙ্গ বামেরা শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যু পেয়েও, দলীয় নেতাদের দূর্বলতা বিশেষত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মতো স্বচ্ছ ভাবমূর্তির নেতা নীরবে ঘরে ঢুকে যাওয়ার কারণে খেসারত দিয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণে বারবার উঠে এসেছে, বুদ্ধবাবুর নেতৃত্বের দূর্বলতা। আর ত্রিপুরায় বাম জমানা শেষ হবার পর ঠিক উল্টো চিত্র ধরা পড়েছে। সে রাজ্যের কুড়ি বছরের মুখ্যমন্ত্রী পদ সামলে বিরোধী দলনেতা হিসেবে মানিক সরকার ছিলেন রাস্তায়। ফলে বিরোধী দল হিসেবে ত্রিপুরায় সিপিআইএমের উপস্থিতি টিকে ছিল। সেই শক্তি নিয়েই এ রাজ্যে দ্বিতীয় লড়াইয়ে নামছে বাম শিবির।
ত্রিপুরার রণভূমিতে বিজেপিরও পরীক্ষা। বিজেপির অন্তর্বর্তী রিপোর্টে বলা হয়েছে, ত্রিপুরায় কঠিন লড়াই। এতে বিপর্যয় হলে তার প্রভাব সরাসরি পড়বে পশ্চিমবঙ্গের আগামী নির্বাচনগুলিতে। বাংলায় গত পুরভোট থেকে স্পষ্ট বিজেপির স্থান তিন নম্বরে। দ্রুত বিরোধী শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বাম শিবির। ঠিক বিপরীতে বাম শক্তির বিশ্লেষণ, দূরের বাংলা বলে পরিচিত ত্রিপুরায় সরকার গড়তে পারলেই পশ্চিমবঙ্গের বাম শিবির হবে বিরাট চাঙ্গা। আশায় দুলছে দুই শিবির। বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার ৬০টি আসনে ইভিএম বন্দি হয়ে যাবে সব উত্তর।