ওয়াকফ বিল সংশোধন নিয়ে পার্লামেন্ট কমিটির বৈঠকে হাত কেটে জখম প্রতিবাদী কল্যাণ

নতুন দিল্লি, ২২ অক্টোবর: ওয়াকফ বোর্ড সংশোধনী বিল (Waqf Bill Row) নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবার নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ…

Kalyan Banerjee Injured in Waqf Bill Row

নতুন দিল্লি, ২২ অক্টোবর: ওয়াকফ বোর্ড সংশোধনী বিল (Waqf Bill Row) নিয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মঙ্গলবার নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যখন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি (Kalyan Banerjee) একটি কাঁচের বোতল ভেঙে ফেলেন এবং তাতে তাঁর ডান হাতের আঙুল কেটে যায়। ঘটনাটি ঘটে বিলটি নিয়ে তর্ক-বিতর্কের সময়, যখন কল্যাণ ব্যানার্জি ও বিজেপি সাংসদ তথা প্রাক্তন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়।

বিতর্কের সূচনা:
বৈঠকে ওড়িশার দুটি সংগঠন ওয়াকফ বিল সংশোধন নিয়ে তাদের বক্তব্য পেশ করছিল। সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ ব্যানার্জি বক্তব্য রাখতে চাইছিলেন। তবে বিজেপির সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেই সময় বক্তব্য রাখছিলেন এবং তিনি ব্যানার্জির বক্তব্য শোনার ইচ্ছে প্রকাশ করেননি। এর ফলেই দুই সাংসদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুরু হয়।

   

পরিস্থিতির উত্তেজনা:
বৈঠকের মাঝে কল্যাণ ব্যানার্জি, গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আচমকা টেবিলের উপর রাখা একটি কাঁচের বোতল ভেঙে ফেলেন। এতে তাঁর ডান হাতের বুড়ো আঙুলে ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর ক্ষত তৈরি হয় এবং ছোট আঙুলেও কাটা লাগে। পরে তাকে পার্লামেন্টের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁকে চিকিৎসার জন্য আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিং এবং অল ইন্ডিয়া মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (AIMIM) দলের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি নিয়ে যান।

বৈঠক থেকে সাসপেনশন:
ঘটনার পরে কল্যাণ ব্যানার্জিকে কমিটির পরবর্তী বৈঠক থেকে সাসপেন্ড করার প্রস্তাব বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে পেশ করেন এবং সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। তবে কল্যাণ ব্যানার্জি এই ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে অস্বীকার করেন। ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশিত হয় যেখানে দেখা যায়, তিনি চিকিৎসা শেষে পার্লামেন্টে ফিরে আসছেন এবং তৃণমূলের একটি স্টাফ তাঁকে স্যুপ খাওয়াচ্ছেন।

বৈঠকের পটভূমি:
গত সপ্তাহেও এই যৌথ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। বিরোধী সাংসদরা সেই বৈঠক বয়কট করেছিলেন, দাবি করেছিলেন যে কমিটি পক্ষপাতদুষ্ট এবং বিজেপি সাংসদ জগদম্বিকা পালকে কমিটির চেয়ারপার্সন পদ থেকে অপসারণ করা উচিত। শিবসেনার সাংসদ অরবিন্দ সাওয়ান্ত বলেন, “কমিটি নীতিশাস্ত্র এবং নৈতিকতার নিয়ম মেনে চলছে না, তাই আমরা বয়কট করেছি।”

ওয়াকফ বিলের বিতর্কিত প্রস্তাব:
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিলটি এই বছরের আগস্ট মাসে সংসদে পেশ করা হয় এবং বিরোধী সাংসদদের প্রবল প্রতিবাদের মধ্যে সেটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল। বিলের মূল প্রস্তাবগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কেন্দ্রীয় ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে অ-মুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব। এছাড়া বোর্ডগুলিতে অন্তত দু’জন নারী সদস্য রাখতে হবে এমন প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী দল কংগ্রেস এই বিলটিকে ‘কঠোর’ এবং ‘সংঘীয় ব্যবস্থার উপর আঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং AIMIM প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসিও এই সংশোধনী নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। বিশেষ করে, অ-মুসলিমদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব বিরোধীদের প্রধান আপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিজেপির প্রতিক্রিয়া:
ওয়াকফ বিল নিয়ে চলমান বিরোধের প্রেক্ষিতে সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, “পূর্ববর্তী কেন্দ্রীয় সরকারগুলো (যারা কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিল) এই সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, আর তাই বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে এই সংশোধনীগুলি আনতে বাধ্য হতে হয়েছে।”

ওয়াকফ বিল সংশোধন নিয়ে তৃণমূলের কল্যাণ ব্যানার্জির প্রতিবাদ এবং বৈঠকে উত্তেজনা আরও একবার প্রমাণ করেছে যে এই বিলটি নিয়ে সংসদে এবং রাজনীতির ময়দানে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। বিজেপির পক্ষ থেকে বিলটি মুসলিম নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য উপস্থাপন করা হলেও, বিরোধী দলের সাংসদরা এটিকে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন।