ভক্তির নামে দীর্ঘদিনের প্রতারণা তিরুপতি মন্দিরে! চাঞ্চল্য CBI রিপোর্টে

tirupati-laddoo-fake-ghee-cbi-investigation

তিরুপতি: ভক্তির নামে প্রতারণা দেশের অন্যতম পবিত্র মন্দির তিরুপতি বালাজীর লাড্ডু প্রসাদ নিয়েই এমন ভয়ঙ্কর সত্য সামনে এসেছে, যা বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে কোটি ভক্তের। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই-এর রিপোর্টে প্রকাশ, ২০১৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে তিরুপতি দেবস্থানমে ব্যবহৃত ঘি আসলে ছিল ভুয়ো, তৈরি হয়েছিল রাসায়নিক মিশিয়ে।

Advertisements

এই জালিয়াতির মূল সূত্রে রয়েছে “ভোল বাবা অর্গানিক ডেয়ারি” নামের সংস্থা, যার পরিচালক পামিল ও বিপিন জৈন। তদন্তে উঠে এসেছে, এই সংস্থা কখনও দুধ বা মাখন কেনেনি, অথচ পাঁচ বছরে তারা ২৫০ কোটিরও বেশি টাকার ‘ঘি’ সরবরাহ করেছে তিরুপতি মন্দিরে।

   

ব্যারাকপুরের সাংসদকে নিশানা করে ফের বিতর্কে তরুণজ্যোতি

সিবিআই সূত্রে খবর, এই তথাকথিত “ঘি” বানানো হতো মোনোগ্লিসারাইড, অ্যাসেটিক অ্যাসিড ও ইস্টার-এর মতো রাসায়নিক মিশিয়ে—যেগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি নেই। রাসায়নিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই ঘি-তে দুধজাত ফ্যাটের অস্তিত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। অথচ সেই ঘি দিয়েই বানানো হচ্ছিল ভগবান বালাজির নিত্য প্রসাদ লাড্ডু যা কোটি কোটি ভক্ত ভক্তি ভরে গ্রহণ করতেন।

আরও বিস্ময়কর তথ্য হলো—২০২২ সালেই ভোল বাবা অর্গানিক ডেয়ারি ব্ল্যাকলিস্টেড হয়েছিল, কিন্তু তবুও সংস্থাটি বিভিন্ন ফ্রন্ট ফার্মের নামে আবারও ঘি সরবরাহ করে চলেছিল। নাম পাল্টে একাধিক জাল কোম্পানির মাধ্যমে তারা চুক্তি নবীকরণ করে, যাতে মন্দির প্রশাসন বুঝতেই পারেনি যে আসলে একই সংস্থা আবারও ফিরে এসেছে।

Advertisements

সিবিআই জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে এই প্রতারণা “organized religious supply fraud” হিসাবে ধরা হচ্ছে। তদন্তে এখন দেখা হচ্ছে, মন্দির ট্রাস্টের কোনও আধিকারিক এই চক্রে জড়িত ছিলেন কি না। আন্দোলনের সুরও উঠেছে। বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতা ও সমাজকর্মীরা দাবি তুলেছেন, এই অপরাধের জন্য শুধু কারাদণ্ড নয়, অপরাধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হোক এবং মন্দির প্রশাসনের পুনর্গঠন করা হোক।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনায় ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা প্রযোজ্য প্রতারণা (ধারা 420), জনস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক পণ্য সরবরাহ (ধারা 272 ও 273) এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (ধারা 120B)। এসবের পাশাপাশি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগও তোলা যেতে পারে। একজন ভক্তের কথায়, “আমরা তিরুপতির লাড্ডু প্রসাদকে শুধু খাবার নয়, ভগবানের আশীর্বাদ বলে মনে করি। যারা সেই বিশ্বাসকে রাসায়নিক দিয়ে কলুষিত করেছে, তারা শুধু অর্থলোভী নয়, তারা পাপী।”

সিবিআই ইতিমধ্যে ভোল বাবা অর্গানিক ডেয়ারির দুই কর্তা পামিল জৈন ও বিপিন জৈনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত চলছে তাঁদের সহযোগী আরও কয়েকটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দিকেও। এই ঘটনায় দেশজুড়ে প্রশ্ন উঠেছে—পবিত্র স্থানগুলিতে ব্যবহৃত খাদ্যসামগ্রী ও প্রসাদের মান নিয়ন্ত্রণে কেন এত অবহেলা? কেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর কঠোর অডিট চালানো হয় না? তিরুপতির লাড্ডু নিয়ে এমন কলঙ্কজনক প্রতারণা শুধু খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, এটি ভারতের ধর্মীয় আস্থার ওপর এক নির্মম আঘাত।