লাড্ডুতে পশুর চর্বি, তিরুপতি মামলায় গ্রেপ্তার ৪

Tirupati: Animal Fat in Laddus, 4 Arrested in Tirupati Case

তিরুপতি (Tirupati) বালাজি মন্দিরে প্রসাদী লাড্ডুতে পশুর চর্বি! ভারতের অন্যতম পবিত্র স্থান তিরুপতি (Tirupati) বালাজি মন্দির। এই মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডু বিশ্বজুড়ে ভক্তদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। সম্প্রতি এই মন্দিরে প্রসাদী লাড্ডুতে পশুর চর্বি মেশানোর অভিযোগ ওঠে, যা পুরো দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তোলে। এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তিরুপতি মন্দিরের ঘি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং তাদের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক গুরুতর অভিযোগ।

Advertisements

মন্দিরে প্রতিদিন ১৫ হাজার কিলো ঘি ব্যবহৃত হয় প্রসাদী লাড্ডু তৈরি করতে। মন্দিরের বিশাল চাহিদা পূরণের জন্য বিভিন্ন ডেয়ারি থেকে ঘি সরবরাহ করা হত। তবে, সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে যে, মন্দিরের প্রসাদী লাড্ডুতে পশুর চর্বি ও মাছের তেল মেশানো হচ্ছিল। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই দেশব্যাপী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। মন্দিরের ভক্তদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ ওঠে।

গত বছর অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার তদন্তের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে। কমিটিতে ছিল সিবিআই ও অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের আধিকারিকরা, পাশাপাশি FSSAI-এর একজন শীর্ষ কর্তা। তদন্ত শুরু হওয়ার পর, সিবিআই এই মামলায় চার জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন রুড়কির ভোলেবাবা ডেয়ারির প্রাক্তন নির্দেশক বিপিন জৈন, বৈষ্ণবী ডেয়ারির সিইও অপূর্ব বিনয়কান্ত চাবড়া, এআর ডেয়ারির এমডি রাজু রাজশেখরন ও আরও এক অভিযুক্ত।  সোমবার অভিযুক্তদের আদালতে পেশ করা হলে চার জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

অভিযোগ অনুসারে, অভিযুক্তরা ভুয়ো নথি তৈরি করে টেন্ডার প্রক্রিয়া জিতেছিল। এই টেন্ডারেই মন্দিরে ঘি সরবরাহের অনুমতি পাওয়া যায়। তাদের সরবরাহকৃত ঘি তিরুপতি মন্দিরের বিশাল চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না। ফলে, ভোলেবাবা ডেয়ারি থেকে ঘি কিনে তাতে ভেজাল মেশানো হত তারপরে মন্দিরে পাঠানো হত।

সিবিআই-এর তরফে জানানো হয় যে, এই ঘি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ জুলাই, ৮টি ট্যাঙ্কারে আসা ঘি-র মধ্যে চারটি ট্যাঙ্কার পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ১৭ জুলাই, সেই পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে, যেখানে দাবি করা হয় যে, ঘি-তে মাছ ও পশুর চর্বি ছিল। এই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিবিআই তদন্ত শুরু করে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়।

Advertisements

এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তৎকালীন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির সরকার। তবে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু অভিযোগ করেছেন যে, এই ঘটনা তার সরকারের শাসনামলে ঘটেছে। তার অভিযোগ, ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানতে একটি চক্রান্ত রচিত হয়েছিল।

এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি এহেন আঘাত সহ্য করতে পারেননি। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেন। সমাজের বিভিন্ন অংশের পক্ষ থেকে ধর্মীয় আস্থা রক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়।

এটি একটি গুরুতর ঘটনা,  সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিরুপতি বালাজি মন্দিরের মতো ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এমন ধরনের ঘটনা হওয়া অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মনে করছেন সাধারন মানুষ।