অসমের (assam) মানস টাইগার রিজার্ভে হাতি শিকারের ঘটনায় অসম পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে, যা অসম পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর (সিএমও) থেকে জানানো হয়েছে, গত ৩ মে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে চিরাং জেলা পুলিশ এই মামলার তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ অভিযানের সময় দুটি এসবিএমএল (সিঙ্গল ব্যারেল মাজল লোডিং) বন্দুক, গোলাবারুদ, ওয়াকি-টকি এবং শিকারের সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। পরবর্তী তদন্তে অভিযুক্তদের কাছ থেকে দুটি হাতির দাঁতও উদ্ধার করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর এক্স-এ একটি পোস্টে জানিয়েছে
মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর এক্স-এ একটি পোস্টে জানিয়েছে, “অসম সরকার বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একটি বড় সাফল্যে, চিরাং পুলিশ ৩ মে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মানস টাইগার রিজার্ভে হাতি শিকারের মামলা ভেঙেছে। তিনজন অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে এবং দুটি এসবিএমএল বন্দুক, গোলাবারুদ, ওয়াকি-টকি এবং শিকারের সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তী তদন্তে দুটি হাতির দাঁতও উদ্ধার হয়েছে।”
ঘটনার বিবরণ (assam)
৩ মে মানস ন্যাশনাল পার্ক (assam) এবং টাইগার রিজার্ভে তিনটি হাতির মৃতদেহ আবিষ্কৃত হয়। মানস টাইগার রিজার্ভের পরিচালক ড. সি রমেশ এএনআই-কে জানান, ১ মে পানবাড়ি রেঞ্জের সিকারিঝাড় এলাকায় দুটি হাতির মৃতদেহ পাওয়া যায়—একটি প্রাপ্তবয়স্ক মাদী এবং একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক নর।
তিনি বলেন, “পুরুষ হাতিটির দাঁত পাওয়া যায়নি, এবং মৃত্যুর কারণ শিকার বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। বন বিভাগ, পশুচিকিৎসক বিশেষজ্ঞ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং এলাকায় পায়ের ছাপ, গাড়ির চাকার চিহ্ন বা অপরাধে ব্যবহৃত সরঞ্জামের সন্ধান করা হয়েছে। গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক সক্রিয় করা হয়েছে এবং স্থানীয় সম্প্রদায় ও তথ্যদাতাদের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।”
ড. রমেশ আরও জানান, একই দিনে পানবাড়ি রেঞ্জের বনসম এলাকার একটি নালার কাছে আরেকটি মাদী হাতির মৃতদেহ পাওয়া যায়। তবে এই হাতির মৃত্যু বৃদ্ধ বয়সের কারণে প্রাকৃতিক বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
তদন্ত ও পুলিশি ব্যবস্থা
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পিসিসিএফ (বন্যপ্রাণী) এবং প্রধান বন্যপ্রাণী ওয়ার্ডেন ড. বিনয় গুপ্তা, বোদোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের বন বিভাগের কাউন্সিল হেড সুমন মহাপাত্র, মানস টাইগার রিজার্ভের পরিচালক ড. সি রমেশ এবং চিরাং জেলার পুলিশ সুপার অক্ষত গর্গ। তদন্তের জন্য চেকপোস্টগুলিতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং পার্শ্ববর্তী বন বিভাগগুলির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে যাতে সন্দেহভাজনরা পালাতে না পারে। ড. রমেশ জানান, “অপরাধীদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে।”
সাইবার আক্রমণে সম্ভবত প্রতিরক্ষা কর্মীদের তথ্য ফাঁস পাকিস্তানের হাতে
মানসে বন্যপ্রাণী শিকারের ইতিহাস
মানস ন্যাশনাল পার্ক (assam) এবং টাইগার রিজার্ভ, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান, দীর্ঘদিন ধরে শিকারিদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে এসেছে। ১৯৮০-এর দশক থেকে ২০০০-এর দশকের প্রথম দিক পর্যন্ত বোদো বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সময় এই এলাকায় ব্যাপক শিকারের ঘটনা ঘটে।
এই সময়ে গণ্ডারের সংখ্যা শূন্যে নেমে আসে এবং হাতি, বাঘ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। বেকারত্ব ও আইনশৃঙ্খলার অভাবে অনেক যুবক শিকারে জড়িয়ে পড়ে এবং ভুটান সীমান্ত দিয়ে অবৈধ বাণিজ্য চলে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বন বিভাগ এবং পুলিশের সমন্বিত প্রচেষ্টায় শিকারের ঘটনা কমেছে। ২০২৩ সালে মানসে পাঁচজন শিকারি গ্রেফতার হয় এবং গণ্ডারের শিং, হাতির দাঁত ও বাঘের হাড় উদ্ধার করা হয়। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে উদালগুড়িতে ৫৪ বছর বয়সী সাধিন নারজারি নামে এক ব্যক্তি গ্রেফতার হয় এবং ১৩ কেজি ওজনের দুটি হাতির দাঁত উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনাগুলি দেখায় যে শিকারের হুমকি এখনও বিদ্যমান, এবং বন বিভাগের তৎপরতা এই অপরাধ দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর অল অসম (assam) স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং অল আদিবাসী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ অসম (আসা) মানসের বনসবাড়ি রেঞ্জের প্রধান গেটে একটি সংবাদ সম্মেলন করে বন বিভাগ, অসম সরকার এবং বোদোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল কাউন্সিলের (বিটিসি) ব্যর্থতার তীব্র নিন্দা করে।
তারা শিকারিদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানায় এবং দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দেয়। অসমের বনমন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারি জানিয়েছেন, সরকার দায়ীদের ধরতে কোনও ত্রুটি রাখবে না। তিনি মানস ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বনাঞ্চলে ড্রোন এবং নাইট-ভিশন সরঞ্জামসহ অতিরিক্ত নজরদারি সংস্থান মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি পার্ক ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার পর্যালোচনার কথাও বলেন।
মানস টাইগার রিজার্ভে (assam) তিনটি হাতির মৃত্যু এবং তার মধ্যে দুটি শিকারের ঘটনা অসমের বন্যপ্রাণী সুরক্ষার জন্য একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। অসম পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং তিনজন অভিযুক্তের গ্রেফতার এই অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।
তবে, শিকারের মূল কারণ—যেমন অবৈধ বাণিজ্য নেটওয়ার্ক, দারিদ্র্য এবং নজরদারির অভাব—এর সমাধান না হলে এই সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে না। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কঠোর আইনি ব্যবস্থা মানসের বন্যপ্রাণীকে রক্ষা করতে পারে।