দিল্লির রোহিণী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত গোলাগুলির (Delhi Rohini Gunfight) পর তিন কুখ্যাত অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৯ মার্চ, মঙ্গলবার রাত ১০:৩০ টার দিকে। পুলিশের এক কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃতদের নাম গোবিন্দ ওরফে কোহলি (৩৩), কৃষ্ণ ওরফে কিনহা এবং দাউদ ওরফে সমীর। এই তিনজন আন্তঃরাজ্য অপরাধী বেগমপুরের পানসালি রোডে একটি অপরাধমূলক কার্যকলাপের পরিকল্পনা করছিল বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে ফাঁদ পাতে।
Also Read | ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বড় খবর, মোদী সরকারের নতুন UPI প্রকল্প
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এই অপরাধীদের একটি চুরি করা কালো ক্রেটা গাড়িতে দেখা যায়। গাড়িটি বেগমপুরের হেলিপ্যাড রোডে চলছিল। পুলিশ যখন তাদের থামতে বলে, তখন এই তিন অপরাধী পুলিশের দিকে পাঁচটি গুলি ছোড়ে। এরপর পুলিশও পাল্টা গোলাগুলি করে এবং তিনজনকেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এই ঘটনা রোহিণী এলাকায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
গোলাগুলির বিবরণ
পুলিশের একটি বিশেষ দল, অ্যান্টি-অটো থেফট স্কোয়াড (এএটিএস), এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়। অতিরিক্ত ডিসিপি বিষ্ণু কুমার জানিয়েছেন, “গত রাতে আমরা তিন আন্তঃরাজ্য অপরাধীর গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য পাই। তারা বেগমপুরে একটি অপরাধের পরিকল্পনা করছিল। আমরা পানসালি রোডে ফাঁদ পেতে তাদের গ্রেফতার করি।” তিনি আরও বলেন, “যখন আমরা তাদের গাড়ি থামাতে বলি, তারা পুলিশের উপর গুলি চালায়। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়, যার ফলে দুজন অপরাধীর পায়ে গুলি লাগে। তিনজনকেই আমরা গ্রেফতার করেছি।”
এই গোলাগুলির সময় মোট পাঁচটি গুলি পুলিশের তরফে ছোড়া হয়। অপরাধীদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল এবং চুরি করা গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গোবিন্দ ওরফে কোহলির বিরুদ্ধে ৭০টিরও বেশি মামলা রয়েছে, যার মধ্যে সম্প্রতি চুরি ও ডাকাতির ঘটনাও রয়েছে। অন্য দুজন, কৃষ্ণ এবং দাউদ, একাধিক অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত।
অপরাধীদের পটভূমি
গ্রেফতারকৃত তিন অপরাধীই দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ জগতের সঙ্গে যুক্ত। গোবিন্দ ওরফে কোহলি একজন কুখ্যাত অপরাধী, যার বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি এবং হয়তো আরও গুরুতর অপরাধের মামলা রয়েছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, এই তিনজন সম্প্রতি দিল্লি ও তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে একাধিক অপরাধ সংঘটিত করেছে। ত .াদের গাড়িটি নেতাজি সুভাষ প্লেস থেকে চুরি করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
এই ঘটনায় পুলিশের তৎপরতা প্রশংসিত হয়েছে। অতিরিক্ত ডিসিপি বিষ্ণু কুমার বলেন, “আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান সফল হয়েছে। এই অপরাধীরা এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছিল। তাদের গ্রেফতার করার মাধ্যমে আমরা একটি বড় অপরাধ রুখতে সক্ষম হয়েছি।” তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং তাদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পুলিশের ভূমিকা ও নিরাপত্তা
এই গোলাগুলির সময় পুলিশের একজন সদস্যও আক্রান্ত হতে পারতেন। তবে তিনি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। এই ঘটনা দিল্লি পুলিশের সাহসিকতা ও প্রস্তুতির প্রমাণ দেয়। রোহিণী জেলার পুলিশ উপ-আয়ুক্ত (ডিসিপি) এই অভিযানের তদারকি করেন এবং সফলভাবে তিন অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়।
দিল্লির রোহিণী এলাকায় গত কয়েক মাসে একাধিক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে ভাউ গ্যাংয়ের তিন সদস্যকে একই এলাকায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই ঘটনাগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তবে পুলিশের তৎপরতায় অপরাধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, যা এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার আশা জাগিয়েছে।
সমাজে প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের প্রশংসা করেছেন। একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা প্রায়ই এই ধরনের অপরাধের খবর শুনি। পুলিশের এই পদক্ষেপ আমাদের নিরাপত্তার জন্য আশ্বাস দেয়।” সামাজিক মাধ্যমেও এই অভিযান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে পুলিশের সাহসিকতার প্রশংসা করলেও, কেউ কেউ এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
দিল্লির রোহিণীতে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির পর তিন অপরাধীর গ্রেফতার এই এলাকায় অপরাধ দমনে পুলিশের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ দেয়। গোবিন্দ, কৃষ্ণ এবং দাউদের মতো কুখ্যাত অপরাধীদের গ্রেফতার করা স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নিরাপত্তার বোধ ফিরিয়ে আনতে পারে। তবে, এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে যে দিল্লির কিছু এলাকায় অপরাধী কার্যকলাপ এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশের তদন্ত এখনও চলছে এবং আগামী দিনে আরও তথ্য প্রকাশ পেতে পারে। এই অভিযান দিল্লি পুলিশের সতর্কতা ও দক্ষতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।