গেমের নেশা রুখতে বড় পদক্ষেপ, বিল পেশ মোদী সরকারের

ভারতে অনলাইন গেমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনে গেম খেলার নেশায় মেতে উঠেছে কিশোর-যুব সমাজ। বিনোদনের অন্যতম বড় মাধ্যম হয়ে উঠলেও, এর…

these-online-games-will-be-banned-modi-government-is-introducing-a-bill-in-the-lok-sabha

ভারতে অনলাইন গেমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোনে গেম খেলার নেশায় মেতে উঠেছে কিশোর-যুব সমাজ। বিনোদনের অন্যতম বড় মাধ্যম হয়ে উঠলেও, এর নেতিবাচক প্রভাবও ক্রমশ ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। একদিকে যেমন শিক্ষাজীবনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব, অন্যদিকে একাধিক ক্ষেত্রে গেমের নেশা থেকে আত্মহত্যা কিংবা পারিবারিক অশান্তির ঘটনাও সামনে আসছে। তাই এবার ক্ষতিকর অনলাইন গেম নিয়ন্ত্রণে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে কেন্দ্র। মোদী (PM MODI)  সরকার লোকসভায় একটি বিশেষ বিল পেশ করতে চলেছে, যাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে— কিছু অনলাইন গেম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।

কেন আসছে এই বিল?

   

কেন্দ্রীয় সরকারের(PM MODI)  দাবি, অনলাইন গেমগুলির মধ্যে অনেকগুলি কেবল বিনোদনের বাইরে গিয়ে মানুষের মানসিক ও সামাজিক ক্ষতি করছে। বিশেষত অল্পবয়সীরা যখন এই গেমের নেশায় মজে যাচ্ছে, তখন পড়াশোনা, স্বাস্থ্য, মানসিক ভারসাম্য সবকিছুই প্রভাবিত হচ্ছে। বেশ কিছু গেমে আবার লুকিয়ে রয়েছে জুয়ার মতো প্রবণতা, যেখানে টাকা লগ্নি করে খেলতে হয়। ফলে একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি, অন্যদিকে মানসিক চাপ— দুটোরই শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, অনলাইন গেম আসক্তি বর্তমানে “ডিজিটাল ড্রাগ”-এর মতো কাজ করছে। এর ফলে রাত জেগে খেলা, ঘুম কমে যাওয়া, একাগ্রতা নষ্ট হওয়া, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি সমস্যা ব্যাপকভাবে দেখা দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বাচ্চাদের মধ্যে হিংসাত্মক মনোভাবও গড়ে উঠছে। তাই বিষয়টি আর হালকাভাবে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছে সরকার।

বিলের মূল উদ্দেশ্য

প্রস্তাবিত বিলে মূলত দুটি দিককে সামনে আনা হয়েছে—

1. ক্ষতিকর ও আসক্তি-সৃষ্টিকারী অনলাইন গেম নিষিদ্ধ করা।

2. অনলাইন গেমিং শিল্পকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা।

সরকারের বক্তব্য, ভারতে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি দ্রুত বাড়ছে। এটিকে পুরোপুরি আটকানো সম্ভব নয় এবং উচিতও নয়, কারণ এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তবে যেসব গেম সমাজে ক্ষতি ডেকে আনছে, সেগুলোকে আইনত বন্ধ করাই হবে বিলের মূল লক্ষ্য।

কোন গেম নিষিদ্ধ হতে পারে?

যে সমস্ত গেমে—

Advertisements

অর্থ বিনিয়োগ করে খেলার ব্যবস্থা রয়েছে

কিশোরদের মধ্যে হিংসা বা আত্মঘাতী প্রবণতা বাড়াচ্ছে

শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের আশঙ্কা রয়েছে

অতিরিক্ত আসক্তি তৈরি করছে

সেসব গেমকে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হবে। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই একাধিক রাজ্যের অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেছে। দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্য যেমন তামিলনাড়ু, কেরল ও কর্নাটক অনলাইন গেম নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তবে সেসব ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এবার সেই অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখেই একটি সর্বভারতীয় আইন আনার চেষ্টা করছে মোদী সরকার।

বিলের প্রভাব

বিল সংসদে পাশ হলে দেশের গেমিং কোম্পানিগুলিকে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে কাজ করতে হবে। যেসব কোম্পানি শিশু বা কিশোরদের জন্য গেম তৈরি করবে, তাদের বিশেষ অনুমতি নিতে হবে। অন্যদিকে, নিষিদ্ধ ঘোষিত গেম চালালে কঠোর শাস্তি ও জরিমানার বিধানও থাকবে।

এছাড়া, সরকার একটি বিশেষ গেমিং রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করার পরিকল্পনা করছে, যারা অনলাইন গেমের উপর নজরদারি চালাবে। এই সংস্থা ঠিক করবে কোন গেম বাজারে চলবে আর কোনটি চলবে না।

সমাজে প্রভাব

বিল কার্যকর হলে একদিকে যেমন ক্ষতিকর গেম থেকে মুক্তি মিলবে, অন্যদিকে বাবা-মায়ের মধ্যেও স্বস্তি আসবে। শিশু ও কিশোরদের পড়াশোনা ও স্বাভাবিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, অনেকের মত, শুধু নিষিদ্ধ করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। সচেতনতা বাড়ানোও সমান জরুরি। তাই সরকারের পাশাপাশি স্কুল, কলেজ ও পরিবারকেও ভূমিকা নিতে হবে।