মোদী প্রশংসা নিয়ে খড়গের মন্তব্যের বুদ্ধিদৃপ্ত জবাব থারুরের

কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা শশি থারুরের (Tharoor) সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসায় থারুরের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর কংগ্রেস সভাপতি…

Tharoor smart reply to kharge

কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা শশি থারুরের (Tharoor) সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসায় থারুরের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে তাঁকে পরোক্ষভাবে কটাক্ষ করেছেন। এর ই কয়েক ঘণ্টা পর, থারুর একটি রহস্যময় সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করে দলের অভ্যন্তরীণ বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছেন।

তিনি (Tharoor) একটি পাখির ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, “উড়তে অনুমতি চাইতে হয় না। ডানা তোমার, আর আকাশ কারও নয়।” এই পোস্টকে দলের সমালোচকদের প্রতি তাঁর জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর পাল্টা হিসেবে, কংগ্রেসের আরেক সাংসদ এম. মানিকম ঠাকুর, যিনি দলীয় নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, একটি তীক্ষ্ণ পোস্টে বলেছেন, “উড়তে অনুমতি লাগে না।

   

পাখিরা উঠতে পারে… কিন্তু আজকের দিনে মুক্ত পাখিকেও আকাশের দিকে নজর রাখতে হয়—বাজপাখি, শকুন আর ‘ঈগল’রা সবসময় শিকারের অপেক্ষায় থাকে। স্বাধীনতা বিনামূল্যে আসে না, বিশেষত যখন শিকারিরা দেশপ্রেমের পালক পরে।” এই ঘটনা কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে আরও প্রকট করেছে।

থরুরের পোস্ট ও খড়গের কটাক্ষ (Tharoor)

২৫ জুন, ২০২৫-এ, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে থারুরের মোদী -প্রশংসার সমালোচনা করে বলেন, “আমরা বলি দেশ প্রথম, কিন্তু কিছু লোকের কাছে মোদী প্রথম, দেশ পরে।” তিনি আরও মন্তব্য করেন, “শশি থারুরের (Tharoor) ইংরেজি খুব ভালো, তাই তাঁকে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে রাখা হয়েছে।”

খড়গের এই মন্তব্যকে থারুরের প্রতি পরোক্ষ কটাক্ষ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে থরুরের ২৩ জুন দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধ, যেখানে তিনি মোদীর “শক্তি, গতিশীলতা এবং বৈশ্বিক মঞ্চে জড়িত থাকার ইচ্ছাকে” ভারতের জন্য “প্রধান সম্পদ” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

থারুরের(Tharoor)  এই নিবন্ধটি ‘অপারেশন সিঁদুর ’-এর প্রেক্ষাপটে লেখা, যেখানে তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তবে, কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁকে এই প্রচেষ্টায় মনোনীত করেনি, বরং তিনি সরকারের আমন্ত্রণে দক্ষিণ আমেরিকা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তাঁর এই ভূমিকা এবং মোদীর প্রশংসা দলের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

মানিকম ঠাকুরের পাল্টা

থারুরের (Tharoor)পাখির ছবি সহ রহস্যময় পোস্টের পর, ২৬ জুন, এম. মানিকম ঠাকুর একটি তীক্ষ্ণ জবাব দেন। তাঁর পোস্টে “বাজপাখি, শকুন আর ঈগল” উল্লেখ করে পরোক্ষভাবে থারুরের দলের প্রতি আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ট্যাগোরের বক্তব্যকে দলীয় নেতৃত্বের সমর্থনে একটি ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা থারুরের ক্রমবর্ধমান স্বাধীন মনোভাবের বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা। এই ঘটনা কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিভেদকে আরও স্পষ্ট করেছে, বিশেষ করে যখন থরুরের মতো একজন প্রভাবশালী নেতা দলীয় লাইন থেকে সরে যাচ্ছেন।

Advertisements

কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সংকট

থারুর (Tharoor)এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে উত্তেজনা নতুন নয়। ২০২২ সালে কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনে খড়গের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পর থেকে থারুরের দলের সঙ্গে সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে। তিনি গত সপ্তাহে স্বীকার করেছেন যে দলের কিছু নেতার সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য রয়েছে, তবে তিনি এটি প্রকাশ্যে আলোচনা করতে অস্বীকার করেছেন। তাঁর মোদী-প্রশংসা এবং অপারেশন সিঁদুরে অংশগ্রহণকে অনেকে দলের নীতির বিরুদ্ধে যাওয়া হিসেবে দেখছেন। পবন খেরা এবং উদিত রাজের মতো নেতারাও থারুরের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন।

থারুরের অবস্থান

থারুর (Tharoor) দাবি করেছেন, তাঁর মোদী -প্রশংসা ছিল “জাতীয় ঐক্য ও স্বার্থের” প্রকাশ, এবং এটিকে বিজেপিতে যোগদানের ইঙ্গিত হিসেবে ভুল বোঝা উচিত নয়। তিনি তাঁর সমালোচকদের অভিযোগকে “বিকৃত” বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর সাম্প্রতিক পোস্ট, “উড়তে অনুমতি চাইতে হয় না,” তাঁর স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারের উপর জোর দেয়। এটি কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে তাঁর স্পষ্ট বার্তা যে তিনি দলীয় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না।

রথযাত্রা ২০২৫: কোন ৬ কাঠে তৈরি জগন্নাথের রথ?

দলের প্রতিক্রিয়া

খড়গে জানিয়েছেন, কংগ্রেস থরুরের মন্তব্য নিয়ে বেশি আলোচনায় যেতে চায় না, কারণ দলের লক্ষ্য দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতা রক্ষা। তিনি বলেন, “৩৪ জন সিডব্লিউসি সদস্য এবং ৩০ জন বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্যের প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত রয়েছে।” তবে, তাঁর কটাক্ষ এবং ট্যাগোরের পোস্ট থেকে স্পষ্ট যে দলের মধ্যে থরুরের অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে।

শশি থারুর (Tharoor) এবং কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে চলমান উত্তেজনা দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্যের উপর প্রশ্ন তুলেছে। থরুরের পাখির পোস্ট এবং ট্যাগোরের “শিকারি পাখি”র পাল্টা জবাব এই সংকটকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। আগামী দিনে এই বিতর্ক কীভাবে দলের গতিপথকে প্রভাবিত করে, তা লক্ষণীয় হবে। থারুরের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ এবং কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক মহলে আলোচনার বিষয় হয়ে থাকবে।