গেরুয়া রাজ্যের মিছিলে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান বিধায়কদের অনুগামীদের

thane-rally-pakistan-zindabad-slogan-shamin-khan-controversy

মহারাষ্ট্রের থানে জেলার এক জনসভাকে ঘিরে ফের রাজনৈতিক উত্তাপ। এনসিপি (এসপি) নেতা এবং থানের প্রভাবশালী বিধায়ক জিতেন্দ্র আওয়াদের ঘনিষ্ঠ সমর্থক শামিন খানের মুখে ‘‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’’ স্লোগান (Pakistan Zindabad slogan) শোনা যাওয়ায় রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে। ইতিমধ্যেই ওই ঘটনার জেরে দায়ের হয়েছে এফআইআর, শুরু হয়েছে দফায় দফায় বিবৃতি–প্রতিবিবৃতি। গেরুয়া শাসিত মহারাষ্ট্রে ঘটনাটি নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

Advertisements

ঘটনাটি ঘটেছে থানের মুম্ব্রা এলাকায় আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিলে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে গাজা–ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষিতে ‘‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’’ সমর্থনে বহু মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়—হাতভর্তি তিরঙ্গা, প্রো-প্যালেস্টাইন ব্যানার, আওয়াদকে সমর্থন করে লেখা পোস্টার, আর সেসবের মাঝেই ভেসে ওঠে বিতর্কিত স্লোগানটি। এনসিপি (এসপি)-র স্থানীয় নেতা শামিন খান, যিনি বিধায়ক আওয়াদের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত, প্রথমে প্যালেস্টাইন সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এরপরেই আচমকাই তাঁর মুখে শোনা যায়—‘‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ!’’

   

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় তীব্র সমালোচনা। অনেকে দাবি করেন, প্যালেস্টাইন সমর্থন জানাতে গিয়ে শামিন খানের এই স্লোগান সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ও ইচ্ছাকৃত, যা ভারতের সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। গেরুয়া শাসিত রাজ্যের বিজেপি-শিবসেনা (শিন্ডে) সরকারও বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। অভিযোগ, এই ধরনের স্লোগান জনমনে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলার সমস্যা বাড়াতে পারে।

থানে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা রুজু হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে সমাজে শত্রুতা সৃষ্টি, বিদ্বেষ উসকে দেওয়া এবং রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান প্রচারের অভিযোগ। তদন্তকারীরা ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন এবং শামিন খানকে শীঘ্রই তলব করা হতে পারে বলেও সূত্রের খবর।

এদিকে রাজনৈতিক অভিজ্ঞদের কাছে জিতেন্দ্র আওয়াদের নাম নতুন নয়। থানের মুম্ব্রা–কলওয়া অঞ্চলে তাঁর শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তি রয়েছে। তবে বিতর্কও তাঁকে বরাবরই ছায়াসঙ্গী করে এসেছে। ২০২৩ সালে সিন্ধি সম্প্রদায় সম্পর্কে মন্তব্যের জেরে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছিল। ২০২৫ সালেও এক জনসভায় ঘৃণাত্মক ভাষণের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই ধারাবাহিকতাতেই তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক আবার তাঁকে আলোচনার কেন্দ্রে এনে ফেলেছে।

বিজেপি-শিবসেনা শিন্ডে শিবিরের অভিযোগ—‘‘এটি কোনও ভুল স্লোগান নয়, বরং আওয়াদ শিবিরের দীর্ঘদিনের পরিচিত মেরুকরণ রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।’’ তাদের দাবি, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় আবেগকে উসকে দিয়ে রাজনৈতিক লাভ তুলতে চাইছেন আওয়াদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠরা।

Advertisements

অন্যদিকে আওয়াদ শিবিরের বক্তব্য—পুরো ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তাঁদের দাবি, মিছিলে হাজারো মানুষ ছিলেন, সেখানে নানা স্লোগান একসঙ্গে ওঠায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। শামিন খানও দাবি করেছেন, ‘‘ভিডিও কাটাছেঁড়া করে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’’

তবে ভিডিও যে স্পষ্ট, তা অস্বীকার করা কঠিন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গাজা-প্যালেস্টাইনের আবেগময় পরিস্থিতি ব্যবহার করে মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক মেরুকরণ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বিশেষত থানের মতো সংবেদনশীল অঞ্চলে একটি মাত্র স্লোগানও বড় উত্তেজনার কারণ হতে পারে।

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। এফআইআর হয়েছে, তদন্ত চলছে, গ্রেফতারও হতে পারে—সংকেত মিলেছে থানে প্রশাসনের শীর্ষমহল থেকে।

ঘটনার জেরে থানে, মুম্ব্রা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাজুড়ে রাজনৈতিক শোরগোল বেড়েই চলেছে। মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আবেগ, ধর্ম এবং পরিচয় রাজনীতির ধারাবাহিক সংঘাতকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে একটি স্লোগান—‘‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’’।