পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে জঙ্গি হামলার বার্তা! এলাকায় চাঞ্চল্য

পুরীর জগন্নাথ মন্দির, (Puri Jagannath) যা ভারতের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান, সেখানে জঙ্গি হামলার হুমকি সম্পর্কিত একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মন্দিরের পরিক্রমা…

Puri Jagannath temple

পুরীর জগন্নাথ মন্দির, (Puri Jagannath) যা ভারতের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান, সেখানে জঙ্গি হামলার হুমকি সম্পর্কিত একটি ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। মন্দিরের পরিক্রমা পথে বুধি মা মন্দিরের দেওয়ালে ওড়িয়া ভাষায় লেখা হুমকিমূলক বার্তা দেখা গেছে, যাতে জগন্নাথ মন্দির ধ্বংস করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামও উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, মন্দিরের কিছু জায়গায় আলোকসজ্জার ভাঙচুরের ঘটনাও সামনে এসেছে। এই ঘটনায় মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে এবং পুরী জুড়ে আতঙ্ক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

   

বুধবার সকালে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দক্ষিণ দিকের পরিক্রমা পথে বুধি মা মন্দিরের দুটি দেওয়ালে এই হুমকিমূলক বার্তা দেখা যায়। বার্তায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে জঙ্গিরা মন্দির ধ্বংস করবে এবং এর সঙ্গে কিছু ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে, যাতে কল করতে বলা হয়েছে।

এই ধরনের হুমকির পর পুরীর পুলিশ তৎপর হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনও পর্যন্ত কে বা কারা এই কাজ করেছে, তা স্পষ্ট হয়নি।

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে সারা বছর ভক্ত ও পর্যটকদের ভিড় থাকে। মন্দিরের নিরাপত্তার জন্য একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা এবং নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রয়েছে। তবুও এই ধরনের ঘটনা ঘটায় স্থানীয় বাসিন্দারা এবং ভক্তরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “নিরাপত্তা ব্যবস্থায় স্পষ্ট গাফিলতি রয়েছে। এত কঠোর নিরাপত্তা থাকার পরও দেওয়ালে এমন হুমকিমূলক বার্তা লেখা হয় কী করে? পুলিশের উচিত সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”

এই ঘটনার পর পুরীর পুলিশ সুপার পিনাক মিশ্র জানিয়েছেন যে, তদন্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া গেছে। পুলিশ এই হুমকির উৎস এবং এর পিছনে থাকা উদ্দেশ্য খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়াও, মন্দিরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

Advertisements

এই ঘটনা শুধুমাত্র পুরীতেই নয়, সারা দেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জগন্নাথ মন্দির ভারতের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। এমন একটি পবিত্র স্থানে হুমকিমূলক বার্তা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ভক্তদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে মন্দিরের নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।

গত জানুয়ারিতে মন্দিরের উপর দিয়ে ড্রোন উড়তে দেখা গিয়েছিল, যা নো-ফ্লাই জোন হওয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছিল। এছাড়াও, জুলাই মাসে রথযাত্রার সময় চারজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি মন্দিরের মেঘানাদ পাচেরি টপকে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিল, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরেকটি ত্রুটি উন্মোচন করেছিল।

মন্দির প্রশাসন এবং পুলিশ এই ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন (এসজেটিএ) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যারা এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করছে। পুরীর ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর চঞ্চল রানা জানিয়েছেন, সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করে দোষীদের চিহ্নিত করা হবে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনার পর মন্দিরের নিরাপত্তা আরও কঠোর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওড়িশা সরকার সম্ভাব্য জঙ্গি হুমকির প্রেক্ষিতে অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম স্থাপনের কথাও বিবেচনা করছে। ভক্ত এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টহল বৃদ্ধি এবং বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে ইউরোপের মাটিতে ২৯৫ গোল বাজাজের

এই ঘটনা ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর হামলার একটি গুরুতর হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ভক্তরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন প্রশাসনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।