‘মন্দিরে গরুর মাংস কাণ্ড বিজেপির ষড়যন্ত্র’, দাবি গগৈয়ের

অসমের ধুবড়ি শহরে একটি মন্দিরের সামনে গরুর মাংস পাওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন ঝড় উঠেছে (gogoi)। কংগ্রেস সাংসদ এবং অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি…

gogoi slams himanta

অসমের ধুবড়ি শহরে একটি মন্দিরের সামনে গরুর মাংস পাওয়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন ঝড় উঠেছে (gogoi)। কংগ্রেস সাংসদ এবং অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি গৌরব গগৈ (gogoi) এই ঘটনার জন্য ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-কে দায়ী করে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।

তিনি এমনকি দাবি করেছেন যে, অসমে আগত আরএসএস কর্মীদের পুলিশ স্টেশনে নিজেদের নিবন্ধন করতে হবে। এই মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে এবং অনেকে এটিকে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি এবং মুসলিম তোষণের প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।

   

গৌরব গগৈর অভিযোগ

ধুবড়ির হনুমান মন্দিরের সামনে ৮ জুন ২০২৫, ঈদ-উল-আজহার পরের দিন গরুর মাংসের অংশ পাওয়া যায়, যা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই ঘটনার পর ধুবড়ি শহরে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশ ১৬ জনকে গ্রেফতার করে। এই ঘটনায় গৌরব গগৈ দাবি (gogoi)করেছেন, মন্দিরে গরুর মাংস রাখার পিছনে বিজেপি এবং আরএসএস-এর হাত রয়েছে।

তিনি বলেন, “এটি একটি ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে বিজেপি এবং আরএসএস সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায়।” তিনি আরও দাবি করেন, “অসমে যারা আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত, তাদের পুলিশ স্টেশনে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখা যায়।”

এই মন্তব্য অসমের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিজেপি এবং আরএসএস-এর নেতারা গগৈর (gogoi) এই দাবিকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘হিন্দুবিরোধী’ বলে সমালোচনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, অনেকে গগৈর এই মন্তব্যকে কংগ্রেসের মুসলিম তোষণ নীতির প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “গৌরব গগৈ আরএসএস-কে দায়ী করে তাঁর ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করতে চাইছেন। এটা কি বাংলাদেশি অভিবাসীদের সমর্থন পাওয়ার কৌশল?”

বিজেপির পাল্টা আক্রমণ

অসমের মুখ্যমন্ত্রী (gogoi) হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গৌরব গগৈর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “গৌরব গগৈর এই ধরনের বক্তব্য তাঁর হিন্দুবিরোধী মানসিকতা প্রকাশ করে। তিনি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টিকারীদের বাঁচাতে চাইছেন এবং আরএসএস-এর মতো জাতীয়তাবাদী সংগঠনের উপর দোষ চাপাচ্ছেন।”

শর্মা এর আগেও গগৈর (gogoi) বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছিলেন, যা গগৈ তীব্রভাবে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা একটি সি-গ্রেডের বলিউড সিনেমার গল্প।”

শর্মা আরও বলেন, “ধুবড়ির ঘটনায় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং ইতিমধ্যে রমজান আলি শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার পিছনে কারা রয়েছে, তা খুঁজে বের করব। কিন্তু কংগ্রেস এই ঘটনাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।”

আরএসএস-এর উপর নিবন্ধনের দাবি

গৌরব গগৈর (gogoi) আরএসএস কর্মীদের পুলিশ স্টেশনে নিবন্ধনের দাবি নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতা দিলীপ সইকিয়া বলেন, “এটা হিন্দু সংগঠনের উপর আক্রমণ। আরএসএস ভারতের একটি জাতীয়তাবাদী সংগঠন, যারা সমাজসেবার কাজ করে। তাদের পুলিশ স্টেশনে নিবন্ধন করতে বলা মানে ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া।” তিনি আরও বলেন, “গৌরব গগৈ ধুবড়ি এবং গোয়ালপাড়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়ার জন্য এই ধরনের মন্তব্য করছেন।”

Advertisements

এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “গৌরব গগৈর (gogoi) এই দাবি অসমকে ‘গ্রেটার বাংলাদেশ’ বানানোর চেষ্টা। তিনি কি চান ভারতীয় নাগরিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হোক, যাতে তাঁর ভোটব্যাঙ্ক নিরাপদ থাকে?”

কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি?

ধুবড়ি এবং গোয়ালপাড়া জেলায় বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রাধান্য রয়েছে। বিজেপি নেতারা দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন যে, তারা এই সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়ার জন্য তোষণ নীতি গ্রহণ করে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, “কংগ্রেস মসজিদের উপর আক্রমণের ভয় দেখিয়ে মুসলিম ভোট পেয়েছে। কিন্তু এখন জনগণ তাদের প্রকৃত চেহারা বুঝতে পারছে।”

গৌরব গগৈর (gogoi) এই মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, তিনি কেন শুধু হিন্দু সংগঠনগুলোকে লক্ষ্য করছেন? এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “গৌরব গগৈর এই মন্তব্য তাঁর ভোটব্যাঙ্ককে খুশি করার জন্য। তিনি বাংলাদেশি অভিবাসীদের সুরক্ষা দিতে চান, তাই আরএসএস-এর উপর দোষ চাপাচ্ছেন।”

পাকিস্তান সংযোগ অভিযোগ

গৌরব গগৈর (gogoi) বিরুদ্ধে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এর আগে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি দাবি করেন, গগৈ ২০১৩ সালে পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং তাঁর স্ত্রী এলিজাবেথ কোলবার্ন একটি পাকিস্তান-ভিত্তিক এনজিও-তে কাজ করেছেন। শর্মা বলেন, “আমাদের কাছে এই বিষয়ে প্রমাণ রয়েছে, যা আমরা ১০ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করব।” গগৈ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এটা একটি মিথ্যা গল্প। আমি যদি এই অভিযোগের জবাবে প্রমাণ দিতে না পারি, তাহলে শর্মার উচিত মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা।”

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জোর! ডুয়ার্সের জাতীয় উদ্যান তিন মাসের জন্য বন্ধ

জনগণের প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা এবং গগৈর (gogoi) মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ অনেকে গগৈর মন্তব্যকে ‘হিন্দুবিরোধী’ এবং ‘বিভাজনমূলক’ বলে সমালোচনা করেছেন। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “গৌরব গগৈর এই বক্তব্য কংগ্রেসের প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ করে। তারা শুধু ভোটের জন্য মুসলিম তোষণ করছে।” অন্যদিকে, কংগ্রেস সমর্থকরা বলছেন, গগৈ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য কথা বলছেন।

ধুবড়ির মন্দিরে গরুর মাংস পাওয়ার ঘটনা এবং গৌরব গগৈর (gogoi) বিজেপি-আরএসএস-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ অসমের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তাঁর আরএসএস কর্মীদের পুলিশ স্টেশনে নিবন্ধনের দাবি অনেকে হিন্দু সংগঠনের উপর আক্রমণ হিসেবে দেখছেন। এই বিতর্ক ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমীকরণকে আরও জটিল করবে। তদন্তের ফলাফল এবং এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে, তা সময়ই বলবে।