তেলেঙ্গানা টানেল ধসে ‘র‍্যাট মাইনার্স’ চরম পর্যায়ে, ৮ শ্রমিক এখনও আটকে

নাগরকুর্নুল, তেলেঙ্গানা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: তেলেঙ্গানার শ্রীশৈলম লেফট ব্যাঙ্ক ক্যানাল (এসএলবিসি) টানেলে গত শনিবার ধসের (Telangana Tunnel Collapse) ঘটনায় আটকে পড়া আটজন শ্রমিককে উদ্ধারের জন্য…

Telangana Tunnel Collapse

নাগরকুর্নুল, তেলেঙ্গানা, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: তেলেঙ্গানার শ্রীশৈলম লেফট ব্যাঙ্ক ক্যানাল (এসএলবিসি) টানেলে গত শনিবার ধসের (Telangana Tunnel Collapse) ঘটনায় আটকে পড়া আটজন শ্রমিককে উদ্ধারের জন্য চলমান প্রচেষ্টায় এখন নতুন মোড় এসেছে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ‘র‍্যাট মাইনার্স’ বা ইঁদুর খননকারীরা টানেলের চরম প্রান্তে পৌঁছে পরিস্থিতি পর্যালোচনা শুরু করেছেন। এই খননকারীরা, যারা ঝুঁকিপূর্ণ ও সংকীর্ণ স্থানে কাজ করার জন্য বিখ্যাত, তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। চার দিন ধরে আটকে থাকা শ্রমিকদের জীবন বাঁচাতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

দিল্লি থেকে ছয়টি ‘র‍্যাট মাইনার্স’ দল ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে, এবং আরও ছয়টি দল শীঘ্রই তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। এই দলগুলি গত বছর অক্টোবরে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর টানেল ধসের ঘটনায় ৪১ জন শ্রমিককে সফলভাবে উদ্ধার করে সারা দেশে পরিচিতি পেয়েছিল। তাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা এই জটিল উদ্ধার অভিযানে আশার আলো জাগিয়েছে।

   

র‍্যাট মাইনার্সরা কাদা ও অস্থিতিশীল ভূমির মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সাবধানে টানেলের গভীরে প্রবেশ করেছেন। তারা টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম)-এর উপরের অংশে পৌঁছেছেন, যেখানে ধারণা করা হচ্ছে শ্রমিকরা আটকে রয়েছেন। টানেলের ভিতরে অবিরাম জল প্রবাহ এই অভিযানকে আরও জটিল করে তুলেছে। জলের স্রোতের কারণে আরও ধসের ঝুঁকি বেড়েছে, এবং প্রতিটি পদক্ষেপ এখন প্রাণঘাতী বিপদের মুখোমুখি। তবুও, এই দলগুলি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছে এবং অন্যান্য উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে মিলে শ্রমিকদের নিরাপদে বের করে আনার পরিকল্পনা তৈরি করছে।

এই অভিযানে ভারতীয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, সিঙ্গারেনি কোলিয়ারিজ, ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এনডিআরএফ) এবং স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ)-এর মতো সংস্থাগুলি সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। মোট ৫৮৪ জনের বেশি কর্মী এই উদ্ধার কার্যক্রমে নিয়োজিত। তারা গ্যাস কাটারের মতো উন্নত সরঞ্জাম ব্যবহার করে ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করছেন। তবে, জল জমে থাকা এবং ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ এই প্রক্রিয়াকে ধীর করে দিচ্ছে।

এই উদ্ধার অভিযানে ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (জিএসআই) এবং ন্যাশনাল জিওফিজিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এনজিআরআই)-এর বিশেষজ্ঞরাও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছেন। স্নিফার কুকুরও মোতায়েন করা হয়েছে, যদিও জল জমার কারণে তাদের কাজে বাধা পড়ছে। টানেলের ভিতরের পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে প্রতিটি পদক্ষেপ সাবধানে পরিকল্পনা করে এগোতে হচ্ছে। জল নিষ্কাশনের কাজ অব্যাহত থাকলেও, শ্রমিকদের অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য এখনও অনেক বাধা অতিক্রম করতে হবে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার সকালে এসএলবিসি টানেলের একটি অংশ ধসে পড়ে এবং আটজন শ্রমিক আটকা পড়েন। এই টানেলটি তেলেঙ্গানার নাগরকুর্নুল জেলার ডোমালাপেন্টার কাছে অবস্থিত এবং এটি বিশ্বের দীর্ঘতম সেচ টানেল হিসেবে পরিচিত। এই প্রকল্পটি নলগোন্ডা ও খাম্মাম জেলায় ৪ লক্ষ একর জমিতে সেচের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু এই দুর্ঘটনা প্রকল্পের নিরাপত্তা ও কারিগরি দিক নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।

এই অভিযানে অংশ নেওয়া একজন র‍্যাট মাইনার, ফিরোজ কুরেশি, সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, “আমরা দিল্লি থেকে জেলা প্রশাসনের অনুরোধে এখানে এসেছি। আমাদের ১২ জনের দলটির টানেল উদ্ধারে অভিজ্ঞতা রয়েছে, যার মধ্যে উত্তরাখণ্ডের অভিযানও অন্তর্ভুক্ত। এখন আমরা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি এবং এনডিআরএফ ও এসডিআরএফ দলের সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করব। টানেলে জলের উপস্থিতি এবং আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছতে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরত্ব এই উদ্ধারকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। তবুও, আমরা সফলতার আশা করছি।”

ফিরোজের এই কথায় আশার আলো ফুটে উঠলেও, তেলেঙ্গানার মন্ত্রী জুপাল্লি কৃষ্ণ রাও আগেই জানিয়েছিলেন যে শ্রমিকদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা “খুবই কম”। তিনি বলেছিলেন, ধ্বংসস্তূপ এবং কাদার পরিমাণ এতটাই বেশি যে উদ্ধারে তিন থেকে চার দিন সময় লাগতে পারে। তবে র‍্যাট মাইনার্সের আগমন এই অভিযানে নতুন গতি এনেছে।

তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ রেবন্ত রেড্ডি এই উদ্ধার অভিযানের তদারকি করছেন। তিনি মন্ত্রীদের এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে শ্রমিকদের বাঁচাতে সমস্ত সম্ভাব্য উপায় ব্যবহার করতে হবে। এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন এবং পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীও এই দুর্ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে এই ঘটনায় শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা, যারা উত্তর প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও ঝাড়খণ্ড থেকে এসেছেন, তাদের প্রিয়জনদের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই ঘটনা দেশজুড়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পে কারিগরি ত্রুটির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে।

এই মুহূর্তে, সবার দৃষ্টি র‍্যাট মাইনার্স এবং অন্যান্য উদ্ধারকারী দলের উপর। তাদের দক্ষতা এবং সাহসই হয়তো এই আটজন শ্রমিকের জীবন বাঁচাতে পারে। তবে, এই দুর্ঘটনা আমাদের সামনে একটি বড় শিক্ষা রেখেছে—প্রকল্পের গতির সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টিও সমান গুরুত্ব পাওয়া উচিত। আপাতত, গোটা দেশ প্রার্থনা করছে যেন এই শ্রমিকরা জীবিত ফিরে আসেন, এবং উদ্ধারকারী দলের প্রচেষ্টা সফল হয়।