তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি কলকাতাকে (Kolkata) ‘ডাম্প ইয়ার্ড’ বলে উল্লেখ করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু এবং হায়দরাবাদের মতো ছয়টি প্রধান শহরের তুলনায় কলকাতার জীবনযাত্রা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে খারাপ অবস্থায় বলে মন্তব্য করেন। তাঁর এই বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং একাধিক মহল থেকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি উঠেছে।
বিতর্কিত মন্তব্যের উৎস
রেভান্থ রেড্ডি জনসভায় বলেন, “কলকাতা নিয়ে কিছু বলার দরকার নেই। যদি বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা শহরের প্রতিযোগিতা হয়, তাহলে কলকাতা প্রথম স্থান অধিকার করবে। এই ছয় মহানগরের মধ্যে একমাত্র হায়দরাবাদ ভালো অবস্থায় রয়েছে।” তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
@MamataOfficial @BanglarGorboMB
Didi,
Telangana Chief minister Revanth Reddy is asserting that Kolkata which is the capital of West Bengal that,
“Kolkata is the world’s largest dumpyard”
He is disrespecting the Kolkata,
Do condemn his wordshttps://t.co/M6xFIhg56L— Telanganite (@Telanganite29) December 5, 2024
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া
রেড্ডির এই মন্তব্য ঘিরে টুইটার এবং ফেসবুকে ঝড় উঠেছে। এক টুইটার ব্যবহারকারী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে রেড্ডির মন্তব্যের কড়া জবাব দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি লেখেন,
“দিদি, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেভান্থ রেড্ডি বলেছেন যে কলকাতা বিশ্বের বৃহত্তম ডাম্প ইয়ার্ড। তিনি আমাদের প্রিয় শহরকে অপমান করছেন। দয়া করে তাঁর বক্তব্যের সমালোচনা করুন।”
অন্য এক ব্যবহারকারী রেড্ডির মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ট্যাগ করে লেখেন,
“@narendramodi, রেভান্থ রেড্ডি #কলকাতা শহরকে অপমান করেছেন। দয়া করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিন। কলকাতা শুধু একটি শহর নয়, এটি আবেগের শহর।”
তেলেঙ্গানার বাসিন্দাদের প্রতিক্রিয়া
তেলেঙ্গানার বাসিন্দারাও রেড্ডির মন্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এক ব্যক্তি লেখেন,
“কলকাতার মানুষ, আমাদের তেলেঙ্গানার এই নেতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। দুঃখিত।”
অন্য এক ব্যবহারকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে লেখেন,
“@MamataOfficial, দয়া করে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রীর এই অসংযত মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিন। উনি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে আমাদের প্রিয় কলকাতাকে অপমান করেছেন।”
মিশ্র প্রতিক্রিয়া
যদিও বেশিরভাগ মানুষ রেড্ডির মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন, কিছু মানুষ তাঁকে সমর্থনও করেছেন। একজন সমর্থক লেখেন,
“টাইগার আসলে সঠিক কথাই বলেছেন।”
তবে এই ধরনের সমর্থন মূলত নিন্দার স্রোতে ঢেকে গেছে। বহু মানুষ রেড্ডির মন্তব্যের জন্য তাঁকে দায়বদ্ধ করার দাবি তুলেছেন।
কলকাতার প্রেক্ষাপট
কলকাতাকে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আবেগের কেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে সুভাষচন্দ্র বসু, এমন বহু মহান মানুষের জন্মস্থান এই শহর। অথচ কলকাতার প্রতি রেড্ডির এই মন্তব্য মানুষকে আহত করেছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই মন্তব্যের জন্য রেড্ডির ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন। রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন,
“কলকাতা সম্পর্কে এমন মন্তব্য অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অপমানজনক। রেড্ডিকে এর জন্য অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে।”
বিজেপি নেতারা যদিও এই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করেননি, তবে তাঁরা দাবি করেছেন যে এই ঘটনা রাজনীতিতে বিভাজন সৃষ্টি করছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও এই বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে রাজনৈতিক মহলে আশা করা হচ্ছে যে তিনি তাড়াতাড়ি এই বিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করবেন।
রেভান্থ রেড্ডির মন্তব্য শুধুমাত্র কলকাতাকে নয়, বাংলার সংস্কৃতি এবং গর্বকে আঘাত করেছে। এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা সহজে মিটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। কলকাতার মানুষ তাঁদের প্রিয় শহরের প্রতি এমন অসম্মান সহ্য করতে প্রস্তুত নন।