তেলেঙ্গানার রাঙা রেড্ডি জেলায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা। সোমবার সকালে চেভেল্লা মণ্ডলের খানাপুর গেটের কাছে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগতির ট্রাক মুখোমুখি ধাক্কা মারে তেলেঙ্গানা স্টেট রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (টিজিএসআরটিসি)-এর যাত্রীবাহী একটি বাসে। দুর্ঘটনায় অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও ১০ জনের বেশি যাত্রী। বাসটিতে তখন প্রায় ৭০ জন যাত্রী ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে সাইবারাবাদ কমিশনারেট এলাকার মধ্যে। সংঘর্ষের অভিঘাত এতটাই প্রবল ছিল যে ঘটনাস্থলেই বহু যাত্রী প্রাণ হারান। বাস ও ট্রাকের দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ সাক্ষ্য দিচ্ছে সংঘর্ষের ভয়াবহতার। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, মুহূর্তে সৃষ্টি হয় চিৎকার ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ; স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ মিলে আহতদের উদ্ধার করতে ছুটে যান ঘটনাস্থলে।
উদ্ধার অভিযান ও তৎপরতা
পুলিশ, দমকল বাহিনী ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় দ্রুত শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। আহতদের চেভেল্লা ও হায়দরাবাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, একাধিক যাত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। দুর্ঘটনার পর দীর্ঘক্ষণ বন্ধ থাকে হায়দরাবাদ-বিজাপুর জাতীয় সড়ক, যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়।
চেভেল্লা থানার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “খানাপুর গেটের কাছে ট্রাক ও টিজিএসআরটিসি বাসের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। ঘটনাস্থলেই বহুজনের মৃত্যু হয়। আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধারকাজ শুরু করি। বিস্তারিত তথ্য তদন্তের পর জানানো হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর শোক ও নির্দেশ
তেলেঙ্গানা মুখ্যমন্ত্রী এ. রেভন্ত রেড্ডি গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে অবিলম্বে সাহায্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, “চেভেল্লা মণ্ডলের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী গভীর শোক জানিয়েছেন। তিনি মুখ্যসচিব ও ডিজিপিকে নির্দেশ দিয়েছেন, আহতদের অবিলম্বে হায়দরাবাদে সরিয়ে এনে সর্বোত্তম চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। পাশাপাশি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে উদ্ধার কার্য তদারকির জন্য মন্ত্রীদের পাঠানো হয়েছে।”
বিরোধী দল ও অন্যান্য নেতাদের প্রতিক্রিয়া
বিএআরএস প্রধান কে. চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর) এই দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে এক বার্তায় জানিয়েছেন, “চেভেল্লা মণ্ডলের মিরজাগুডার কাছে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানি গভীরভাবে মর্মাহত করেছে। নিহতদের পরিবারকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের উন্নত চিকিৎসা ও মৃতদের পরিবারের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করুক সরকার।”
তেলেঙ্গানা পরিবহনমন্ত্রী পোন্নম প্রভাকরও জানিয়েছেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। আহতদের চিকিৎসা এবং পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াতে সমস্ত সহায়তা দেওয়া হবে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
উপ-মুখ্যমন্ত্রীর শোক প্রকাশ
উপ-মুখ্যমন্ত্রী পবন কল্যাণ এক বিবৃতিতে বলেন, “চেভেল্লার বাস দুর্ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ১৭ জনের মৃত্যু এবং বহু আহতের খবর গভীরভাবে শোকাহত করেছে। নিহতদের পরিবারকে আমি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বান্দি সঞ্জয় কুমার সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “চেভেল্লায় আরটিসি বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে বহু মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে শোকাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তেলেঙ্গানা সরকার যেন অবিলম্বে আর্থিক সহায়তা দেয়, কেন্দ্রীয় সরকারও সব রকম সহায়তা করবে।”


