১৯ লক্ষ চাকরির প্রসঙ্গ তুলে নীতীশকে আক্রমণ তেজস্বীর

রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা এবং বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব (Tejaswi)মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) ও বিজেপির জোট সরকারের বিরুদ্ধে…

Tejaswi slams nitish kumar

রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা এবং বিহার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদব (Tejaswi)মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) ও বিজেপির জোট সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি সরকারের ১৯ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং রাজ্যে ক্রমবর্ধমান অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন।

পাটনায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তেজস্বী বলেন, “তারা ১৯ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই প্রতিশ্রুতির কী হল? নীতীশ কুমার কি কখনও এই বিষয়ে জনসমক্ষে কথা বলেছেন? বড় বড় ঘোষণা করে কী লাভ, যদি তারা জনগণের সামনে এসে ব্যাখ্যা করতে না পারেন? নির্বাচন আসছে বলে তারা যা খুশি বলবে, কিন্তু এই সরকারের সময় শেষ। এই সরকার বিদায় নেবে।”

   

চাকরির প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিতর্ক

তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছেন যে নীতীশ কুমারের সরকার আরজেডি’র কর্মসংস্থান সংক্রান্ত নীতি নকল করছে। সম্প্রতি নীতীশ কুমার ঘোষণা করেছেন যে আগামী পাঁচ বছরে বিহারে এক কোটি চাকরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। তেজস্বী এই ঘোষণার সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “নীতীশ কুমার আগে আমাদের ১০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতিকে অবাস্তব বলে সমালোচনা করেছিলেন।

এখন তারা এক কোটি চাকরির কথা বলছেন। এই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত? তারা কি এর জন্য কোনো পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন?” তিনি আরও বলেন যে আরজেডি’র ১৭ মাসের মহাগঠবন্ধন শাসনকালে পাঁচ লক্ষ সরকারি চাকরি এবং ৪.৫ লক্ষ শিক্ষকের স্থায়ী নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যা নীতীশ সরকারের ১৯ বছরের শাসনকালে সম্ভব হয়নি।

আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও অপরাধের উত্থান

তেজস্বী বিহারের আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বিহার এখন দেশের ‘অপরাধের রাজধানী’ হয়ে উঠেছে। গত ছয় মাসে নয়জন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিদিন খুন, লুটপাট, অপহরণ এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। মিডিয়া এই অপরাধের খবর প্রকাশ করছে, কিন্তু কে এর জন্য দায়ী?”

তিনি পাটনার রামকৃষ্ণ নগরে ব্যবসায়ী বিক্রম ঝা’র হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করে বলেন, এই ঘটনা রাজ্যের ভিভিআইপি এলাকায় ঘটেছে, যেখানে নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা। তিনি আরও বলেন, “যদি এই নিরাপদ এলাকায় আমরা নিরাপদ না থাকি, তাহলে বিহারের জনগণ কীভাবে নিরাপদ থাকবে?” তেজস্বী অভিযোগ করেন যে সরকার অপরাধীদের আশ্রয় দিচ্ছে, যার ফলে তারা আরও নির্ভীক হয়ে উঠছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীরবতা নিয়ে প্রশ্নতেজস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কি কখনও বিহারের এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবেন, নাকি শুধু বক্তৃতা দিয়ে যাবেন? তাঁকে তাঁর টেলিপ্রম্পটার ছেড়ে বিহারের প্রকৃত সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে।”

তিনি অভিযোগ করেন যে নীতীশ কুমার একটি “অচেতন অবস্থায়” রাজ্য পরিচালনা করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী দূর থেকে রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। তেজস্বী আরও বলেন, “নীতীশ কুমার আর বিহার পরিচালনার জন্য সক্ষম নন। তাঁর সময় শেষ।”

নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক সমীকরণ

বিহারে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন, যা অক্টোবর বা নভেম্বর ২০২৫-এ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) এখনও চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করেনি। বর্তমান বিধানসভায় ২৪৩টি আসনের মধ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) ১৩১টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে।

Advertisements

যার মধ্যে বিজেপির ৮০ জন, জেডি(ইউ)-এর ৪৫ জন, হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা (সেকুলার)-এর ৪ জন এবং ২ জন স্বতন্ত্র বিধায়ক রয়েছেন। অন্যদিকে, বিরোধী ইন্ডিয়া ব্লকের ১১১টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে আরজেডি’র ৭৭ জন, কংগ্রেসের ১৯ জন, সিপিআই(এমএল)-এর ১১ জন, সিপিআই(এম)-এর ২ জন এবং সিপিআই-এর ২ জন বিধায়ক রয়েছেন।

তেজস্বী দাবি করেছেন যে মহাগঠবন্ধন জোট, যার মধ্যে আরজেডি, কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলি রয়েছে, ২০২৫-এর নির্বাচনে জয়ী হবে। তিনি বলেন, “বিহারের জনগণ ২০২৫-এ তাদের সরকার বেছে নেবে, এবং কেউ তাদের থামাতে পারবে না।” তিনি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়ে বলেন যে বিহারের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

সাম্প্রতিক অপরাধ ও জনমত

তেজস্বী বিহারে ক্রমবর্ধমান অপরাধের ঘটনার তালিকা তুলে ধরে বলেন, “গত তিন-চার দিনে ৪১টি অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ধর্ষণ, খুন এবং লুটপাটের ঘটনা রয়েছে।” তিনি পাটনায় চার বছরের একটি শিশুকন্যার হত্যার ঘটনা এবং ব্যবসায়ী বিক্রম ঝা’র হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ করে বলেন, এই ঘটনাগুলি রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবস্থার প্রমাণ। তিনি অভিযোগ করেন যে পুলিশ এফআইআর নথিভুক্ত করতে দ্বিধা করছে, এবং তদন্ত প্রায়ই ফলপ্রসূ হচ্ছে না, যার ফলে অপরাধীরা শাস্তি এড়িয়ে যাচ্ছে।

শিলিগুড়িতে শুরু হল মেয়র কাপ ইন্টার স্কুল টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতা

নির্বাচনী কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

তেজস্বী বলেন যে আরজেডি তাদের নির্বাচনী প্রচারে কর্মসংস্থান, শিক্ষা এবং আইনশৃঙ্খলার উপর জোর দেবে। তিনি দাবি করেন যে মহাগঠবন্ধন জোটের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই এবং সঠিক সময়ে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিহারের যুবকদের জন্য ১০ লক্ষ চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, এবং আমরা তা পূরণ করেছি। এখন আমরা আরও বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি।” তিনি নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন সরকারকে “দৃষ্টিহীন” বলে সমালোচনা করে বলেন, “তাদের কাছে কোনো নতুন ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি নেই।”

তেজস্বী যাদবের এই তীব্র সমালোচনা বিহারের আসন্ন নির্বাচনের রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবং আরজেডি’র নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া ব্লকের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশিত। তেজস্বী’র অভিযোগ এবং জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ বিহারের নির্বাচনী ময়দানে একটি কঠিন লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।