‘শরিয়া’ সংবিধানের উপরে নাকি ক্ষমতার জন্য? তেজস্বীর মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

Tejashwi-Yadav showcause

বিহারের রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদবের (Tejashwi-Yadav) বিতর্কিত মন্তব্য। পাটনার গান্ধী ময়দানে ‘ওয়াকফ বাঁচাও, সংবিধান বাঁচাও’ সমাবেশে তিনি দাবি করেন, মহাগঠবন্ধন (আরজেডি-কংগ্রেস-বাম) ক্ষমতায় এলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রণীত ওয়াকফ (সংশোধন) অ্যাক্টকে “আবর্জনায় ফেলা হবে”।

Advertisements

এই মন্তব্যের (Tejashwi-Yadav) জবাবে ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) রাজ্যসভা সাংসদ সুধাংশু ত্রিবেদী তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এই দলগুলো সংবিধানের সঙ্গে তামাশা করছে। আরজেডি এবং সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলো ‘সমাজবাদ’ নয়, ‘নামাজবাদ’-এর পক্ষে দাঁড়িয়েছে।” তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, “ইন্ডি জোট কি বিহারে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে?” এই ঘটনা আসন্ন বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তরজাকে আরও তীব্র করেছে।

গত ২৯ জুন, ২০২৫ তারিখে পাটনার গান্ধী ময়দানে ইমারত-ই-শরিয়া নামে একটি মুসলিম সংগঠনের আয়োজিত সমাবেশে তেজস্বী (Tejashwi-Yadav) বলেন, “এনডিএ সরকার তার শেষ দিন গুনছে। নভেম্বরে মহাগঠবন্ধন ক্ষমতায় এলে এই ওয়াকফ অ্যাক্ট কুড়েদানে ফেলা হবে।”

তিনি আরও দাবি করেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টান সকলে একসঙ্গে লড়েছিলেন, এবং এই দেশ কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। তেজস্বী নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের উদ্যোগের বিরুদ্ধেও সতর্ক করে বলেন, এটি বিজেপির পক্ষে ভোটারদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র।

বিজেপি এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছে। সুধাংশু ত্রিবেদী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “পাটনার গান্ধী ময়দানে, যেখানে জরুরি অবস্থার সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ সংবিধান রক্ষার জন্য জড়ো হয়েছিলেন, সেখানে তেজস্বী (Tejashwi-Yadav) সংসদে পাস হওয়া আইন কুড়েদানে ফেলার কথা বলছেন। এটি সংসদ এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি অসম্মান।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ইন্ডি জোট ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য সংবিধানকে ‘শরিয়া স্ক্রিপ্টে’ রূপান্তরিত করতে চায়। ত্রিবেদী প্রশ্ন তুলেছেন, সৌদি আরব, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক বা পাকিস্তানের মতো মুসলিম দেশগুলিতেও কি ওয়াকফের মতো আইন রয়েছে? তিনি বলেন, “ইন্ডি জোট কি বিহারে শরিয়া আইন চালু করতে চায়?”

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংও তেজস্বীকে আক্রমণ করে বলেন, “লালু যাদব বংশবাদী রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন। সমাজবাদী বলে দাবি করা তেজস্বী (Tejashwi-Yadav) এখন ‘নামাজবাদী’ হয়ে গেছেন।” বিজেপি দাবি করেছে, আরজেডি এবং সমাজবাদী পার্টি সমাজবাদের নামে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে, যা দরিদ্র ও নিপীড়িত মুসলিমদের অধিকারের জন্য লড়াই নয়।

আরজেডি এই অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছে। দলের মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারি বলেন, “গান্ধী ময়দানে ওয়াকফ সংশোধন বিলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কণ্ঠস্বর উঠতেই বিজেপি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তারা এটিকে হিন্দু-মুসলিম ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এই দেশ ঘৃণার এজেন্ডায় চলবে না, সংবিধান ও আইনের নিয়মে চলবে।”

Advertisements

কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেন, “সংসদে পাস হওয়া আইন পরিবর্তন করা যায়। সুধাংশু ত্রিবেদী যদি এই মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতি না বোঝেন, তবে তিনি সংসদে কী করছেন?” তিনি বিজেপির মন্তব্যকে ‘জাতিবিরোধী’ বলে সমালোচনা করেন।

ওয়াকফ (সংশোধন) অ্যাক্ট, ২০২৫ গত ৩ ও ৪ এপ্রিল সংসদের উভয় কক্ষে পাস হয় এবং ৫ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির সম্মতি পায়। এই আইনে ওয়াকফের গঠন পুনঃসংজ্ঞায়িত করা, জরিপ ও নিবন্ধন প্রক্রিয়া উন্নত করা, সরকারি তদারকি বাড়ানো এবং ওয়াকফ সংক্রান্ত সংস্থায় অমুসলিম ও মহিলা সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে বিধান রয়েছে। বিজেপি দাবি করেছে, এই সংশোধনী দরিদ্র মুসলিম, মহিলা ও বিধবাদের কল্যাণে কাজ করবে।

বিহারের মন্ত্রী প্রেম কুমার বলেন, “এই সংশোধনী ওয়াকফ সম্পত্তির আয় সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করবে। তেজস্বী ভোটের জন্য ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন।” তবে, আরজেডি এই আইনকে ‘কালো আইন’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছে, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার কেড়ে নেবে।

বাংলা থ্রিলার কেন ভারতীয় ওটিটি প্ল্যাটফর্মে আধিপত্য বিস্তার করছে? পরিসংখ্যান ও বিশ্লেষণ

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “তেজস্বীর মন্তব্য সংবিধানের প্রতি অসম্মান।” অন্যদিকে, আরজেডি সমর্থকরা বলছেন, “বিজেপি ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করছে।”

এই বিতর্ক (Tejashwi-Yadav) বিহারের নির্বাচনী রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিজেপি ও জেডি(ইউ)-এর এনডিএ জোট এবং আরজেডি-কংগ্রেস-বামেদের ইন্ডি জোটের মধ্যে এই তরজা আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে। তদন্ত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ কীভাবে এগোয়, তা রাজ্যের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।