তেজস্বীর নাম বাদ! ভোটার তালিকা নিয়ে রাজনীতির ঝড়, ECI-র পালটা দাবি ‘নাম রয়েছে’

পাটনা: বিহারের ভোটার তালিকা প্রকাশের পরই শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। শনিবার রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-এর নেতা ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব (Tejashwi Yadav) অভিযোগ…

Tejashwi Yadav

পাটনা: বিহারের ভোটার তালিকা প্রকাশের পরই শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। শনিবার রাষ্ট্রীয় জনতা দল (RJD)-এর নেতা ও প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব (Tejashwi Yadav) অভিযোগ করেন, তাঁর নিজের নামও নাকি তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। কিন্তু সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI)। কমিশনের তরফে প্রকাশিত খসড়া তালিকায় স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, তেজস্বী যাদবের নাম ক্রমিক নম্বর ৪১৬-এ রয়েছে।

তবে এই ঘটনার জেরে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো ঝড় উঠেছে। এক লাইভ সাংবাদিক সম্মেলনে তেজস্বী বলেন, “আমার নিজের নামই ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে?” তাঁর দাবি, এই বিশেষ নিবিড় সংশোধনী (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়া মোটেই স্বচ্ছ নয়। রাজ্যের দরিদ্র, পিছিয়ে পড়া এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভোটারদের নাম ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

   

তেজস্বীর দাবি খণ্ডন করে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দেয়, তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। পাশাপাশি কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সংশোধনের যাবতীয় তথ্য নিয়ম মেনেই জানানো হচ্ছে। ইসির মতে, ভোটার তালিকা সংশোধনের সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়ম মেনেই করা হয়েছে এবং ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাম সংশোধনের সুযোগ থাকছে।

কমিশনের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এবারের SIR প্রক্রিয়ায় বিহারজুড়ে মোট ৬৫,৬৪,০৭৫টি নাম বাদ পড়েছে। যার ফলে রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭.৮৯ কোটি থেকে কমে ৭.২৪ কোটিতে এসে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি নাম বাদ পড়েছে পাটনা জেলায়, এরপর রয়েছে গয়া, সীতামারহি, আরারিয়া, পূর্ণিয়া, দরভাঙ্গা, সিওয়ান, বৈশালী, বেগুসরাই এবং জামুই জেলার নাম।

নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, নাম বাদ পড়ার মূল কারণ হল ইএফ (Enumeration Form) জমা না দেওয়া। এই ফর্মগুলি ভোটারদের পৌঁছে দিয়েছিলেন বুথ লেভেল অফিসার (BLO) বা রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রতিনিধি। প্রায় ৬৫.৬৪ লক্ষ ফর্ম জমা পড়েনি, যার জেরে সেইসব নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

Advertisements

তেজস্বী-সহ একাধিক বিরোধী নেতার দাবি, এই পুরো প্রক্রিয়াই পক্ষপাতদুষ্ট। ইচ্ছাকৃতভাবে দরিদ্র এবং প্রান্তিক ভোটারদের টার্গেট করা হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক দল এই প্রসঙ্গ সংসদে তোলার দাবি জানালেও, কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়ে দিয়েছে— নির্বাচন কমিশনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদে আলোচনা সম্ভব নয়। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী কিরণ রিজিজু জানান, প্রাক্তন লোকসভা অধ্যক্ষ বলরাম জাখরের রায় অনুসারে, সংসদে নির্বাচন কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা করা যায় না।

কমিশনের তরফে ভোটারদের আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, যাঁদের নাম ভুলবশত বাদ পড়েছে, তাঁরা ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করে সংশোধন করাতে পারবেন। যথাযথ পরিচয়পত্র ও ফর্ম জমা দিলেই নাম ফেরত পাওয়া সম্ভব।

তেজস্বী যাদবের অভিযোগ ঘিরে বিহারের রাজনৈতিক আবহ ফের উত্তপ্ত। ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তবে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য অনুযায়ী, এখনই আতঙ্কের কিছু নেই— কারণ সংশোধনের দরজা এখনও খোলা। তবে এই ইস্যুতে বিরোধীরা রাজনৈতিক ময়দান ছাড়ার পাত্র নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।