বুধবার (১৮ জুন, ২০২৫), রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব (tejashwi) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন বিহার সফর (২০ জুন) নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেছেন, মোদী বিহারে আসছেন ‘ন্যাশনাল দামাদ আয়োগ’ (এনডিএ)-এর বৈঠকে অংশ নিতে এবং শুভেচ্ছা জানাতে।
বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী (tejashwi) অভিযোগ করেছেন, মোদী কর্মসংস্থান বিতরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ বা অভিবাসন বন্ধ করতে নয়, বরং বিহারের জনগণকে আবারও ‘প্রতারণা’ করতে আসছেন। পাশাপাশি, তিনি জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) এবং বিহার সরকারের উপরও তীব্র কটাক্ষ করেছেন, বিশেষ করে ‘আরএসএস কোটা’ এবং ‘ভুজা পার্টি’ নেতাদের নিয়ে।
মোদীর বিহার সফর ‘ন্যাশনাল দামাদ আয়োগ’?
পটনায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তেজস্বী যাদব (tejashwi) বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এনডিএ-র অর্থ কী তা বোঝাবেন। তিনি ‘ন্যাশনাল দামাদ আয়োগ’-এর বৈঠকে আসছেন এবং শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন। আমি ভাবছি, তিনি মঞ্চে তিন জামাইকে মালা পরিয়ে স্বাগত জানাবেন কিনা।
সন্তোষ মাঝি কি প্রধানমন্ত্রীকে মালা পরাবেন, নাকি অশোক চৌধরীর জামাই, না কি চিরাগ পাসওয়ানের জামাই? প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান বিতরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ বা অভিবাসন বন্ধ করতে আসছেন না, বরং আবার প্রতারণা করতে আসছেন। তিনি দীর্ঘ বক্তৃতা দেবেন, আমাদের গালি দেবেন।”
তেজস্বী (tejashwi) এই বক্তব্যে জেডিইউ নেতা সন্তোষ মাঝি, অশোক চৌধরী এবং লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস)-এর নেতা চিরাগ পাসওয়ানের পারিবারিক সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, এনডিএ নেতাদের জামাইরা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পাচ্ছেন, যা তিনি ‘ন্যাশনাল দামাদ আয়োগ’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিহারের এনডিএ সরকারের নেতৃত্বের উপর পারিবারিক রাজনীতির প্রভাবের অভিযোগ তুলেছেন।
‘আরএসএস কোটা’ বিতর্ক (tejashwi)
তেজস্বী যাদব (tejashwi) বিহার সরকারের মন্ত্রী অশোক চৌধরীর একটি বিবৃতির উল্লেখ করে সরকারে ‘আরএসএস কোটা’-র অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “জনতা দল ইউনাইটেডের মন্ত্রী বলছেন, এতে কী অভিযোগ করার আছে? এটাই তো প্রমাণ। তাদের নিজেদের লোকেরা এটি প্রমাণ করেছে।
আমরা জানতে চাই, আর কতজন আরএসএস কোটায় আছেন এবং বিহারে আরএসএস কোটা কোথায়? মুখ্যমন্ত্রী এটি আমাদের জানান। যখন তাদের মন্ত্রী বলছেন যে তারা আরএসএস কোটায় এসেছেন, কমিশনে জায়গা পেয়েছেন, তাহলে এতে আর কী বাকি আছে? এটি সম্পূর্ণ প্রমাণিত।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে তেজস্বী (tejashwi) ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, জেডিইউ এবং বিজেপির মধ্যে গঠিত এনডিএ সরকারে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)-এর প্রভাব রয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে এই বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
‘ভুজা পার্টি’ ও নীতীশ কুমারের পুত্রের প্রসঙ্গ
তেজস্বী যাদব (tejashwi) জেডিইউ নেতা অশোক চৌধরী এবং সঞ্জয় ঝা-কে ‘ভুজা পার্টি’-র নেতা বলে কটাক্ষ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই নেতারা তাদের নিজেদের পরিবারের সদস্যদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের পুত্র নিশান্ত কুমারকে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, “এই ‘ভুজা পার্টি’-র লোকেরা ঈশ্বরের আশীর্বাদে এমন অবস্থায় আছেন। সঞ্জয় ঝা তাঁর সন্তানদের ঠিক করে ফেলেছেন, অশোক চৌধরী তাঁর সন্তানদের ঠিক করে ফেলেছেন, দীপক জি তাঁর স্ত্রীকে ঠিক করে ফেলেছেন।
নিশান্ত কুমার জি রাজনীতিতে আসতে চান, কিন্তু ‘ভুজা পার্টি’-র লোকেরা তাঁর সঙ্গে অস্বস্তি বোধ করেন এবং তাঁকে রাজনীতিতে আসতে দিতে চান না। তারা মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যবহার করছেন, কারণ তিনি অচেতন অবস্থায় আছেন। এটি একটি বড় বিষয়।” তেজস্বী আরও অভিযোগ করেছেন যে, এই নেতারা তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিশেষ করে জামাইদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, যা বিহারের রাজনীতিতে পারিবারিকতন্ত্রের প্রভাব বাড়াচ্ছে।
বিহারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
তেজস্বী যাদবের (tejashwi) এই মন্তব্য বিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। বিহারে এনডিএ সরকার গঠনের পর থেকে জেডিইউ এবং বিজেপির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে নানা জল্পনা চলছে। নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জেডিইউ কেন্দ্রে এনডিএ-র একটি গুরুত্বপূর্ণ শরিক, এবং তাঁর সমর্থন ছাড়া বিজেপির সরকার গঠন কঠিন হয়ে পড়ে। তেজস্বী এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এনডিএ নেতাদের উপর আক্রমণ শানিয়েছেন।
তিনি বিহারের জনগণের মুখোমুখি হয়ে দাবি করেছেন, মোদী সরকার এবং নীতীশ সরকার বিহারের উন্নয়নের জন্য কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, “বিহারের জনগণ বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং অভিবাসনের সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য কিছু করছেন না। তিনি কেবল বক্তৃতা দিতে এবং আমাদের সমালোচনা করতে আসছেন।”
মেসি ভক্তদের জন্য সুখবর, যুবভারতী নয় কলকাতার এই স্টেডিয়ামে আসছেন কিংবদন্তি
এনডিএ-র প্রতিক্রিয়া
এনডিএ নেতারা তেজস্বী যাদবের (tejashwi) এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। জেডিইউ নেতা সঞ্জয় ঝা বলেন, “তেজস্বী যাদবের এই ধরনের মন্তব্য বিহারের জনগণের প্রতি অসম্মান। তিনি এনডিএ সরকারের উন্নয়ন কাজের সমালোচনা করছেন, কিন্তু তাঁর দল যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন বিহারে কী উন্নয়ন হয়েছিল?” বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধরী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী মোদী বিহারের উন্নয়নের জন্য ক্রমাগত কাজ করে চলেছেন। তেজস্বী যাদবের এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক হতাশার প্রকাশ।”
তেজস্বী যাদবের (tejashwi) এই মন্তব্য বিহারের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিহার সফর এবং এনডিএ-র বৈঠকের প্রেক্ষাপটে তাঁর ‘ন্যাশনাল দামাদ আয়োগ’ এবং ‘ভুজা পার্টি’ মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি, ‘আরএসএস কোটা’-র অভিযোগ বিহার সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যুগুলি বিহারের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তেজস্বী যাদবের এই আক্রমণের মাধ্যমে আরজেডি বিহারের জনগণের মধ্যে এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা করছে।