রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব (tejashwi) রবিবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৪ সালে এনডিএ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ‘হাইজ্যাক’ করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই বিজেপির আইটি সেল সেই তথ্য জানতে পারে।
বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী (tejashwi) আরও দাবি করেছেন, ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচন ন্যায্যভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি। তিনি মহাগঠবন্ধনের মিত্র কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর মহারাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে উত্থাপিত সন্দেহের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এই ঘটনা ভারতের গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
পাটনায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তেজস্বী (tejashwi) বলেন, “২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো হাইজ্যাক করা হয়েছে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে, নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগেই বিজেপির আইটি সেল সেই তথ্য জানতে পারে। আমরা এই বিষয়ে নজর রাখছি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনভাবে কাজ করা উচিত। যদি এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রভাবিত হয়, তাহলে জনগণ কীভাবে ন্যায়বিচার আশা করবে?
তেজস্বী (tejashwi) ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, “২০২০ সালের নির্বাচনে কী হয়েছিল, তা সবাই জানে। আমরা সরকার গঠন করতে চলেছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তিনটি সাংবাদিক সম্মেলন করে ব্যাখ্যা দিয়েছিল, কেন ভোট গণনা সন্ধ্যায় বন্ধ করা হয়েছিল।
কেন রাতে গণনা পুনরায় শুরু হয়েছিল? যে মহাগঠবন্ধন প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল, পরে তাদের পরাজিত বলে ঘোষণা করা হয়।” এই অভিযোগ নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
তেজস্বী (tejashwi) আরও বলেন, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি মহারাষ্ট্র নির্বাচনে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’-এর অভিযোগ তুলেছেন, যেখানে বিজেপি-নেতৃত্বাধীন জোট জয়ী হয়েছিল। রাহুল একটি প্রবন্ধে দাবি করেছেন, মহারাষ্ট্রে নির্বাচনী কারচুপি হয়েছে এবং এই একই কৌশল বিহার নির্বাচনেও প্রয়োগ করা হবে, যেখানে বিজেপি হারার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, “বিজেপি যেখানেই হারছে, সেখানেই এই ধরনের কারচুপি হবে।” তবে, নির্বাচন কমিশন রাহুলের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে, যা বিতর্ককে আরও তীব্র করেছে।
তেজস্বী যাদবের (tejashwi) এই অভিযোগগুলো ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি বলেন, “সবাই জানে যে সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিজেপির প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে। আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁর লক্ষ্য সরকার গঠন নয়, বরং বিহারকে শক্তিশালী করা। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি বিহারের জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন।
২০২০ সালের বিহার নির্বাচনে মহাগঠবন্ধন, যার মধ্যে আরজেডি, কংগ্রেস এবং বামপন্থী দলগুলো ছিল, ১১০টি আসন পেয়েছিল, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১২২টি আসনের থেকে কম ছিল। আরজেডি ৭৫টি আসন নিয়ে একক বৃহত্তম দল হয়েছিল, কিন্তু এনডিএ, বিজেপি ও জেডি(ইউ)-এর জোট, ১২৫টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় আসে।
তেজস্বী দাবি (tejashwi) করেছেন, গণনা প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কারণে মহাগঠবন্ধনের জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিনি কয়েকটি কেন্দ্রে সংকীর্ণ ব্যবধানে পরাজয়ের কথা উল্লেখ করে পুনর্গণনার দাবি জানিয়েছিলেন, যদিও নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সমস্ত নিয়ম কঠোরভাবে পালন করা হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশনের প্রতি তেজস্বী(tejashwi) ও রাহুলের অভিযোগ গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্ব নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন পরিচালনা। কিন্তু বিজেপির প্রভাবে এই প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ। এই অভিযোগগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে এটি ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি গুরুতর হুমকি।
বিহারে এই বছরের শেষে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তেজস্বী যাদব (tejashwi) মহাগঠবন্ধনের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে, যারা বিজেপি ও মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জোটের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। তেজস্বী বলেন, “আমরা শুধু সরকার গঠনের জন্য লড়ছি না, আমরা বিহারের জনগণের অধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছি।” তিনি জনগণকে সতর্ক থাকার এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার উপর নজর রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
হংকংয়ের বিরুদ্ধে বড় পরীক্ষার অপেক্ষায় ভারত
এই অভিযোগগুলো ভারতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিজেপি ও এনডিএ এখনও এই অভিযোগের জবাব দেয়নি, তবে নির্বাচন কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিস্থিতি ভারতের গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ককে আরও গভীর করেছে। বিহারের আসন্ন নির্বাচন এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে, যেখানে তেজস্বী যাদব ও মহাগঠবন্ধন জনগণের সমর্থন জোগাড় করার চেষ্টা করবে